ইসরায়েলের আকাশ ও স্থলপথে লেবাননের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। বৈরুতসহ দেশের সীমান্ত এলাকায়ও লাগাতার বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক মানুষ চরম বিপদে পড়েছেন। শুক্রবার লেবানন ও সিরিয়ার মধ্যে অবস্থিত মাসনা সীমান্ত ক্রসিং-এ ইসরায়েল বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। বহু লেবাননবাসী এই ক্রসিং ব্যবহার করে সিরিয়ার দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, মাসনা ক্রসিং দিয়ে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর অস্ত্র চোরাচালান চলছিল, যা থামাতে তারা ওই অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়েছে। হামলায় সড়কপথের একটি বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে অনেক মানুষ সড়কের বড় বড় গর্ত পেরিয়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা করছেন।
ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তায় মারাত্মক সংকট
হামলার ফলে মাসনা ক্রসিং দিয়ে খাদ্য ও মানবিক সহায়তার পরিবহনেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক ম্যাথিউ হোলিংওর্থ উল্লেখ করেন, এই ক্রসিং দিয়ে সবচেয়ে কম খরচে এবং সহজে লেবাননে পণ্য আনা সম্ভব ছিল। ইসরায়েলের আক্রমণ এসব সুযোগকে প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সীমান্তের অন্যান্য রাস্তাগুলোও বন্ধ হয়ে গেলে, মানবিক সহায়তা এবং মানুষের নিরাপত্তা আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বৈরুতেও তীব্র হামলা, হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার চেষ্টা
আজ রাজধানী বৈরুতের রাফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দক্ষিণ উপকণ্ঠেও ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়েছে। হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাশেম সাফিয়েদ্দিন-কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ৩০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত দুই ডজনেরও বেশি শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মানবিক বিপর্যয় ও উদ্বাস্তু সংখ্যা বাড়ছে
জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক ইমরান রিজা বলেছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত আক্রমণে লেবাননে বেসামরিক মানুষ সত্যিকারের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। গত ১০ দিনে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে, আর লেবাননের অন্তত ১০ লাখ মানুষ সরাসরি এই হামলার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসামরিক স্থাপনায় আক্রমণের কারণে মানুষের আতঙ্ক ও উদ্বেগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-র কর্মকর্তা রুহা আমিন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে লেবাননে প্রায় ৯০০টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে এই কেন্দ্রগুলোতে এখন আর জায়গা নেই, এবং অনেক মানুষ খোলা জায়গায়, রাস্তায় কিংবা পার্কে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
গৃহকর্মীদের পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন
লেবাননে কর্মরত প্রবাসী নারী গৃহকর্মীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার প্রধান ম্যাথিউ লুসিয়ানো। সংঘাতের কারণে অনেক গৃহকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন, এবং যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তারা গ্রেপ্তার কিংবা লেবানন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে মানবিক সহায়তা খোঁজার সাহস পাচ্ছেন না। ফলে তাদের অবস্থাও অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের আক্রমণ দেশটির অবকাঠামো ও বেসামরিক জনগোষ্ঠীর জন্য অভূতপূর্ব বিপর্যয় ডেকে আনছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল