আল্লাহ তায়ালা রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময়ে প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন, মুমিন মুসলমানদের এ আনন্দই হলো পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’। যে নবীজির নূরের আলোতে সারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল। তাঁর ওপরই নাজিল হয়েছিল আসমানি গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের আলো হয়ে। তিনি ছিলেন সত্যবাদী তথা আল আমিন।
সাহাবি হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরও জানাচ্ছি যে, আমি হাবিব আমার পিতা নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল এবং নবী হজরত ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ, আর আমার মাতা (আমিনার) স্বপ্ন। নবীদের মাতাগণ এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতা তাঁকে প্রসবের সময় এমন এক নূর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল। (ইবনু হিব্বান আস সহিহ-৬৪০৪, আল মুসতাদরাক-৩৫৬৬, তাবারানি)।
রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের উৎসব পবিত্র আল কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, এখানে ফজল ও রহমত দ্বারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভাগমন উদ্দেশ্য।
রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালন করতেন।
হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবার দিন রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম -১১৬২)।
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হাদিসে কি মিলাদুন্নবীর কথা আছে? জি, আমরা দেখতে পাই জামে তিরমিজি দ্বিতীয় খন্ডে ২০৩ পৃষ্ঠায় মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে একটি অধ্যায়ই রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকি (রহ.) এর দালায়েলুন নবুওয়াত প্রথম খন্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় ফি মিলাদে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীর্ষক একটি অধ্যায়ও রয়েছে। সাহাবাগণও মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন। সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজরত আমির আনসারি (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন, তিনি রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিলাদত উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের ঘটনাগুলো শোনাচ্ছেন এবং বলছেন এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিনে তাশরিফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে খুশি হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং সব ফেরেশতা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমার মতো এরূপ কাজ করবে, সেও নাজাত লাভ করবে। (আত তানবির ফি মাওলিদিল বাশির ওয়ান নাজির, সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, জালালুদ্দিন সুয়ুতি, হাকিকতে মুহাম্মদী মিলাদে আহমদী। সাহাবাগণ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করেছেন এ সম্পর্কে আরেকটি দলিল... হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) নিজেই বর্ণনা করেন, একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরিফ পাঠ করছিলেন। (এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন, স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের ওপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন) শ্রবণকারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে। (সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমিন।
♦ লেখক : খতিব, সিদ্দিকে আকবর (রা.) জামে মসজিদ মোহাম্মদপুর, ঢাকা
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ