বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশে কৃষিতে নীরব বিপ্লব

ঝর্ণা মনি

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার দিকে এগিয়ে চলেছে দেশের কৃষি খাত। ফসল উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। বর্তমান সরকারের সুপ্রসারিত কৃষিনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্যিক কৃষি উন্নয়ন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়নসহ কৃষির আধুনিকীকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষিতে ঘটছে নীরব বিপ্লব। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী, চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সপ্তম স্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধান, গম, আলুসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য খাতেই বইছে উন্নয়নের জোয়ার। বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি। বছরে আলু উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। শুধু উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। গত বছর আলু রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। মত্স্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ বছরে চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। ভিটামিনখ্যাত শাক-সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৩২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার, ২ লাখ ৪ হাজার ও ১ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ভুট্টার ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণের বেশি। শুধু দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোই নয়, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কৃষি খাতের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, ১৪২৩ (১ মার্চ)-এর বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। ধান, মাছ, মাংস, আম, পেয়ারা ও ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ করায় কৃষিতে আধুনিকায়ন ঘটেছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে কৃষিতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ, দফায় দফায় সারের দাম কমানো, কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. জামাল উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন ৩ গুণের বেশি, গম ২ গুণ, সবজি ৫ গুন ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। সরকারের মনোযোগ, কৃষি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ, সহজ কিস্তিতে ঋণব্যবস্থার কারণে কৃষিতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এসেছে। এ ছাড়া দেশে শিক্ষিত কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে কৃষকের ছেলেই কৃষক হবে— এমন ধারণা থেকে আমরা বের হতে পেরেছি। তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর