বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিআরটিএ, পুলিশ বাহিনী, ছাত্র সংগঠনগুলোকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগ। এজন্য আমাদের বৈজ্ঞানিক সমাধানের দিকে জোর দিতে হবে। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে আগে এসব বিষয়ে আগ্রহ ছিল না। আগে একটি প্রেশার গ্রুপ ছিল যারা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করত। এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের কাজ করতে হবে।
এজন্য বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট আইন সংস্কার করতে হবে। এর সঙ্গে শহরের গার্মেন্টগুলো অন্যত্র সরাতে হবে। তিনি বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা এক দিনে তৈরি হয় না। তা দীর্ঘদিনে তৈরি হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এখন থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে। আগে কিন্তু এগুলো প্রধান সড়কে আসতে পারত না। শেখ হাসিনা এর মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার এই ঘোষণায় এই চালকদের সাহস আরও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তখন এই চালকরা মানেনি। এ কারণে এই চালকরা এখন বেপরোয়াভাবে সব জায়গায় চলাচল করছে। বৈজ্ঞানিকভাবে এই রিকশা রাস্তায় চলাচলে উপযোগী না। এর ব্রেক কাজ করে না, পরীক্ষামূলকভাবে অন্য গাড়ির সঙ্গে চলার এর যোগ্যতাও নেই। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে এগুলোর লাইন্সেসও দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর যেহেতু দেশে ট্রাফিক পুলিশ ছিল না আবার এখন যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছেন তাদের মধ্যেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমার মতে এই রিকশাগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এটিও গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। এর চেয়ে সাধারণ রিকশা নিরাপদ। মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ঢাকা আগে থেকেই বিশৃঙ্খল শহর ছিল। একটি শহরকে সুশৃঙ্খল করতে যেভাবে আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং করতে হয় তা এখানে নেই। আবার যে বাহিনী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে জড়িত তারা এই দায়িত্বের চেয়ে অর্থ উপার্জনে বেশি মনোযোগী ছিল। এমনকি এজন্য সে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সেটিও অনেক সময় তারা মানেনি। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে প্রথমে সড়কের ক্যাপাসিটি বুঝতে হবে।
এখানে কী পরিমাণ সড়ক প্রয়োজন, কোন পরিবহনে একসঙ্গে বেশি যাত্রী ধারণ করতে পারবে এভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর সঙ্গে যেসব রাস্তার আশপাশে ফুটপাত বেদখল হয়ে গেছে এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। এখন যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছে এবং তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং পুলিশ বাহিনী আগের মতো অবস্থায় নেই এজন্য পাইলট বেসিসে কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের সহযোগিতা করতে হবে।