সম্ভাবনার অপার দিগন্ত
জিঞ্জিরার হালকা প্রকৌশল শিল্পের মাধ্যমেই পূরণ হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর দেশীয় কারিগরদের দক্ষতাসহ আন্তরিক উদ্যম মিলিয়ে জিঞ্জিরা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের চীন-জাপান। বর্তমানে জিঞ্জিরাকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র কারখানাগুলো থেকে বছরে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত অনেক পণ্যই দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দূরে থাক উল্টো 'নকলবাজ' নামের দুর্নামের সিলমোহর মারা এই 'ইঞ্জিনিয়ারদের' কপালে। অথচ সহযোগিতা দেওয়া গেলে এই জিঞ্জিরা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের চীন-জাপান। রাজধানীঘেঁষা কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকায় ছোট-বড় দুই হাজার কারখানা থাকলেও দেশজুড়ে একই আদলের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে ৪০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের হালকা প্রকৌশল শিল্পে বছরে টার্নওভার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৬ লাখ কর্মীসহ পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৬০ লাখ লোকের ভাগ্য। জিঞ্জিরার আগানগর, বাঁশপট্টি, থানাঘাট, ফেরিঘাট এলাকার বাসাবাড়িতে গোপনে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা, যেখানে ফ্লাঙ্, ওয়াটার হিটার, শ্যাম্পু, সাবান, আফটার শেভ লোশন, ত্বকে ব্যবহারের ক্রিমসহ বিদেশি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নকল পণ্য তৈরি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেও চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের যন্ত্রাংশের একচেটিয়া দখল ছিল বাংলাদেশের বাজার। অল্প দিনের মধ্যেই জিঞ্জিরায় তৈরি যন্ত্রাংশ সেই স্থান পূরণ করে চলছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি অনুমোদন না পাওয়ার কারণে নিজেদের তৈরি মূল্যবান সব যন্ত্র-সরঞ্জামাদির গায়েও মেড ইন চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নামে সিলমোহর মেরে তা বাজারজাতে বাধ্য হন তারা। জিঞ্জিরা শিল্প নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) পরিচালক ড. ইহসানুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাপান, চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শিল্পোন্নত সব দেশই শুরুতে হালকা প্রকৌশল খাতে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে টাইম বাউন্ড ভিশন ডকুমেন্ট পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ না নেওয়ায় 'নকলবাজ' দুর্নামের সিলমোহরেই আটকে আছে জিঞ্জিরা শিল্পের আকাশছোঁয়া সম্ভাবনা। ড. ইহসানুল করিম বলেন, হালকা প্রকৌশল শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই ৫০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।