প্রেম। সুন্দর ও সাবলীল সম্পর্কগুলোর একটি। প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। মানুষের মনের দখল নিতে প্রেমিক বা প্রেমিকার জুড়ি নেই। বয়স, কাল ও পাত্র এসব যাচাই করে ওঠার আগেই মনের লেনদেনটা হয়ে যায়। কিন্তু সব প্রেম আলোচনায় আসে না। কিছু প্রেম হয় প্রবলভাবে সমালোচিত। সমালোচনার পেছনে প্রেমিক বা প্রেমিকার সামাজিক অবস্থান বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মিডিয়ার ফলোআপে মুখরোচক শিরোনামে বন্দি হতে হয়। তাই বলে প্রেম থেমে থাকে না মোটেও। প্রেমের রঙিন সময়ের বিপরীতে সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিজের মানসম্মান ও ক্যারিয়ারের সর্বনাশ দেখতে হয়। ‘প্রেমেই সর্বনাশ’ এ নিয়ে আজকের আয়োজন-
ডায়ানা ও যুবরাজ চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর কাহিনি
ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কেবল একজন; প্রিন্সেস ডায়ানা। ডায়ানা ও যুবরাজ চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর কাহিনি। তার পুরো নাম ছিল ডায়ানা স্পেন্সার। তাকে দেখেই রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন যুবরাজ তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়ানা পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আর ডায়ানার দৃষ্টিতেও প্রিন্স চার্লসই সবচেয়ে আরাধ্য পুরুষ। দুজন দুজনের প্রেমে মজে গেলেন। বিশ্বে ঝড় উঠল। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অসম্মত হলেও পরে রাজি হয়ে যান। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই মহা-ধুমধামে তাদের বিয়ে হয়। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টিভির পর্দায় উপভোগ করল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। তখন প্রিন্স চার্লসের বয়স ছিল ৩২ আর ডায়ানার বয়স ২০ বছর। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দের জোয়ারে শুরু হলো চার্লস আর ডায়ানার নতুন জীবন। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে ফিকে হতে লাগল সম্পর্ক। এর মধ্যে বিয়ের এক বছরের মাথায় ডায়ানা অনুভব করলেন চার্লস তাকে আগের মতো আর ভালোবাসে না। একান্তে সময় দিতে চায় না। যেন একটু বেশি ব্যস্ততা দেখাচ্ছে।
চাইলেই এড়িয়ে যায়। বিষয়টি একদিন-দুদিন করে বেশ কয়দিন খেয়াল করলেন ডায়ানা। এর পর প্রিন্সকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন, এই অবহেলার মানে কী। প্রিন্স তখন এড়িয়ে গেলেন। ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার ব্যস্ততার কথা বলে স্ত্রীর ভালোবাসাকে চেপে রাখলেন। এসব নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুজন দুজনকে সন্দেহ করতে থাকলেন। প্রিন্স চার্লসও ডায়ানাকে নিয়ে নানা ঘটনা-রটনার খবর জানলেন। প্রায়শ এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়ে গেল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের সাত বছর পর ঘটল মারাত্মক ঘটনাটা।
১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটা টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে দুটি কণ্ঠের সংলাপ। একটি নারীকণ্ঠ, অন্যটি পুরুষ। নারীকণ্ঠটি প্রিন্সেস ডায়ানার। পুরুষ কণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর কথোপকথনটি ওই সময়ের। সাইরিল রিনান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং জেন নরগোভ নামে আরেকজন মিলে গোপনে আঁড়ি পেতে ডায়ানা ও জেমস গিলাবের কণ্ঠ ধারণ করেন। এরপর সেটি এক সময় প্রিন্স চার্লসের হাতে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাসেটের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে। প্রকাশিত হয়ে পড়ে আলোচিত এই অডিও টেপটি। ক্যাসেট প্রকাশের পর বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ছোঁয়া লেগেছিল রাজপ্রাসাদেও। এর ফলে সংসারে ভাঙনের সুর উঠল। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। পরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মিসরীয় ধনকুবের ডোডি আল ফায়াদের সঙ্গে জড়ান ডায়ানা। কিন্তু খুব বেশি দিন দুনিয়ার বুকে টিকতে পারেননি সুন্দরী ডায়ানা।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটেনের রাজপরিবারের অন্যতম সদস্য প্রিন্সেস ডায়ানা এবং তার বন্ধু মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের ডোডি আল ফায়াদ ফ্রান্সের প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
বারলুসকোনির বিতর্কগুলোর অধিকাংশই নারীকেন্দ্রিক
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি। বিতর্ক যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছিল না তার। সবচেয়ে বড় বিষয়, তাকে ঘিরে হওয়া বিতর্কগুলোর অধিকাংশই নারীকেন্দ্রিক। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মিডিয়ায় অকাট্য প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়। আর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সবার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হওয়ার পরও সিলভিও বারলুসকোনি নিজে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তিনি নিজে অস্বীকার করলে কী হবে, তার স্ত্রী ভেরোনিকা ল্যারিও স্বামীকে ‘অসুস্থ মানসিকতার পুরুষ’ অভিহিত করে ডিভোর্স দেওয়ার ঘোষণা দেন। সিলভিও বারলুসকোনির বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ ছিল ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরী ব্যালে ড্যান্সারের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা। রুবি রুবাকুওরি নামের ওই কিশোরী ড্যান্সার বারলুসকোনির কাছ থেকে উপহার হিসেবে ৭ হাজার ইউরো এবং একটি ডায়মন্ডের নেকলেস নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও অনৈতিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। এই নারীর বিরুদ্ধে চুরি-চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। এর বাইরেও বিচিত্র অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি। তিনি নাকি এখনো তার জমকালো পার্টিতে সঙ্গ দেওয়া নারীদের জন্য প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করেন। যৌন কেলেঙ্কারি, অবৈধ সুবিধা গ্রহণ ও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের মুখে ৭৬ বছর বয়সি বারলুসকোনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কয়দিন আগেও ইউটিউবে তার ভিডিও কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা চলে বারলুসকোনি এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্লে-বয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর হয়েই চলেছেন প্লে-বয় খ্যাত ইতালির এই সাবেক নির্বাহী।
দীর্ঘদিনের গৃহপরিচারিকার সঙ্গে স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন
তার উত্থান অনেকটাই স্বপ্নের মতো। প্রথম জীবনে একজন বডিবিল্ডার হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছান তিনি। এরপর হলিউডের টিকিট নিয়ে আস্তে আস্তে সাফল্যের মুকুট পরিধান করেন। আর হলিউড অভিনেতা থেকে আরনল্ড সোয়ার্জনেগার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর বনে যান। তার জীবনের সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু একটি কেলেঙ্কারিতে সব এলোমেলো হয়ে যায়। আরনল্ড সোয়ার্জনেগার নিজ বাড়িতে থাকা দীর্ঘদিনের গৃহপরিচারিকার সঙ্গে স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন। গৃহপরিচারিকা মিলড্রেড প্যাট্রিসিয়ার সঙ্গে সোয়ার্জের ১৪ বছর বয়সি একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। মিলড্রেড নিজে তাদের স্ক্যান্ডালটি প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে টার্মিনেটর-খ্যাত সোয়ার্জনেগার অভিযোগ স্বীকার করে নেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎগতিতে খবরটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ভক্তদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এরপর সোয়ার্জনেগারের স্ত্রী মারিয়া শ্রিভার দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসার ছেড়ে চলে যান।
বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনস্কির প্রেমে তোলপাড় সারা দুনিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়। উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তিনি দারুণ বিপাকে পড়েন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২, তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কির রসালো প্রেম-কাহিনি জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ ওটাই ছিল ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এ রকম নারী কেলেঙ্কারির প্রথম ঘটনা। ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিল স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে রাজনৈতিক চড়াই-উৎরাইয়ে যতটা না বেগ পেতে হয়েছে, সে রকমটা হয়নি সাধারণ মানুষের বেলায়। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল। কারণ সে সময় মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ছিল খুবই ভালো এবং বেকারত্বের হার ছিল ন্যূনতম পর্যায়ে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন ক্লিনটন। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চাকরি পায় লুইস এবং ক্লার্ক কলেজ গ্র্যাজুয়েট সুন্দরী মনিকা লিউনস্কি। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তখন সপরিবারে এই রাজকীয় প্রাসাদে বাস করতেন। ২২ বছরের সুন্দরী মনিকার সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যেই সখ্য গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গভীর প্রণয় চলাকালে মনিকা এবং ক্লিনটন নিয়মিত অভিসারে মিলিত হতেন। তাদের প্রেম এতটাই রসালো ছিল যে, তারা হোয়াইট হাউসেই নয় বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এর মধ্যে পাঁচবার এ রকম অভিসারের সময় ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসেই ছিলেন। কিন্তু তাদের এ অভিসারের খবর হিলারি তো দূরের কথা কাকপক্ষীও টের পায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে মনিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপের। আলাপচারিতার একপর্যায়ে মনিকা তার বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকর্মী লিন্ডাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার গোপন অভিসারের কথা জানান। লিন্ডা মনিকাকে এ সংক্রান্ত প্রমাণ ধরে রাখতে নানা পরামর্শ দেন।
এখানেই ভুলটা করে বসেন মনিকা। গোপন কথা গোপনই রাখতে হয়। এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ড্রাজ রিপোর্ট ওয়েবসাইটে। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সিনেট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ইমপিচমেন্টের দাবি করেন। ক্লিনটনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক সদস্য ও বিরোধী রিপাবলিকানরা এ দাবি সমর্থন করেন।
ফলে সিনেটে এ বিষয়ে ২১ দিন ধরে তুমুল বিতর্ক হয়। অবশেষে ভোটাভুটিতে ক্লিনটন জয়লাভ করেন। অর্থাৎ ওই যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পান। হিলারি ক্লিনটন পুরো ঘটনায় স্বামীর পাশে থেকে স্বামীর মনোবল জোগান। পুরো ঘটনাটি মার্কিন ইতিহাসে মনিকাগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত।
আলোচিত-সমালোচিত প্লেবয় হয়েছেন নিকোলাস সারকোজি
আরেক আলোচিত-সমালোচিত প্লে-বয় হচ্ছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। ব্যক্তিগত জীবন ও আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনিও কম বিতর্কের জন্ম দেননি। তার ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার পেছনে সারকোজির সাবেক স্ত্রী সিসিলিয়ারও যথেষ্ট অবদান ও অনুপ্রেরণা রয়েছে। সারকোজি স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী থাকাকালে সিসিলিয়া তার উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের পরিণয়ের ঘটনাকেও বেশ বিচিত্রই বলা চলে। ১৯৮৪ সালে এক বিখ্যাত টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়েছিল সিসিলিয়ার। শহরের তৎকালীন মেয়র হিসেবে সারকোজিও উপস্থিত ছিলেন সিসিলিয়ার বিয়েতে। বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে, বিয়ের সেই অনুষ্ঠানেই নাকি নববধূ সিসিলিয়ার প্রেমে পড়েন সারকোজি। বিয়ে হয়ে গেলেও সিসিলিয়াকে জীবনে পাওয়ার আশা ছাড়েননি তিনি। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় সত্যি সত্যিই সারকোজির টানে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে সংসার আর দুই সন্তানকে ফেলে ঘর ছাড়েন সিসিলিয়া। ততদিনে অবশ্য সারকোজিও বিয়ে করে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে কী? তিনিও প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে প্রেয়সীকে বিয়ে করলেন ১৯৯৭ সালে। কিন্তু এত ভাঙাগড়ার পরও সারকোজির জীবনে সিসিলিয়া এক সময় হয়ে গেলেন ইতিহাস। ২০০৭ সালে সিসিলিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে ক্ষমতাসীন অবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদে যাওয়া প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম লেখান সারকোজি। এরপর নানা ঘটনা-রটনার অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালের ২ ফেব্র“য়ারি বিয়ে করেন ইতালিয়ান পপগায়িকা ও সুপার মডেল কার্লা ব্র“নিকে। এ সম্পর্ক নিয়েও নাকি চলছে দারুণ টানাপড়েন!
প্রেমের জন্য সিংহাসন ছেড়ে বিখ্যাত রাজা অ্যাডওয়ার্ড
রাজা অষ্টম অ্যাডওয়ার্ড প্রেমের জন্য সিংহাসন ছেড়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ১৯৩১ সালের ১০ জানুয়ারি এক পার্টিতে প্রিন্স অব ওয়েলস অ্যাডওয়ার্ডের সঙ্গে তালাকপ্রাপ্ত এবং পুনর্বিবাহিত আমেরিকান নারী ওয়ালিস সিম্পসনের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। এর পর তাদের এই সাক্ষাৎ চলতে থাকে। ১৯৩১ সালের মে, ১৯৩২ এর জানুয়ারিতে তাদের দেখা হয়। সে বছরই জানুয়ারিতে একটি দুর্গে অ্যাডওয়ার্ড ও সিম্পসন একত্রে পুরো একটি সপ্তাহ কাটান। ১৯৩৪ সালের আগস্টে সিম্পসনের স্বামীকে ছাড়াই অ্যাডওয়ার্ড তাকে নিয়ে ছুটি কাটাতে স্পেন ও পর্তুগালের উপকূলে ক্রুজে ভ্রমণ করেন। সে বছরই অ্যাডওয়ার্ড সিম্পসনকে বাকিংহাম প্যালেসে নিয়ে আসেন এবং তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর পর থেকেই এ দুজনকে ঘিরে ব্রিটিশদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা ও গুজব ডালপালা মেলতে থাকে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের অ্যাডওয়ার্ড আর তালাকপ্রাপ্ত পুনর্বিবাহিত নারী সিম্পসনের এই মেলামেশাকে কেউই ভালো দৃষ্টিতে নিল না। তবুও তাদের মধ্যকার নিষিদ্ধ প্রণয় থেমে ছিল না। ১৯৩৬ সালে অ্যাডওয়ার্ড যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন তার এই প্রণয় নিয়ে লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলো। এ সম্পর্কের ব্যাপারটি তখন ব্রিটেনের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে। আর এসবের কারণে ওয়ালিস সিম্পসনের সঙ্গে তার স্বামী আর্নেস্ট সিম্পসনের সম্পর্কে চূড়ান্ত টানাপড়েন শুরু হলো এবং ওয়ালিস সিম্পসন স্বামীর কাছে ডিভোর্স চাইলেন। ১৯৩৬ সালের নভেম্বরে কিং অ্যাডওয়ার্ড প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলিকে জানালেন, তিনি সিম্পসনকে বিয়ে করতে চান। প্রধানমন্ত্রী রাজাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ব্রিটিশ নাগরিকরা কোনোভাবেই তালাকপ্রাপ্ত আমেরিকান নারীকে তাদের রানী হিসেবে মেনে নেবে না। মাঝখানে অ্যাডওয়ার্ড ভিন্ন এক প্রক্রিয়ায় সিম্পসনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। যে প্রক্রিয়ায় তাদের বিয়ে ঠিকই হবে; কিন্তু সিম্পসন রানী হবে না। কিন্তু এই উদ্যোগ ধোপে টিকল না। অ্যাডওয়ার্ড বিয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে ১৯৩৬ সালের ১০ ডিসেম্বর অ্যাডওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন ছেড়ে দেন।
টমাস জেফারসনের প্রথম কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মতো এতটা আলোচিত ও রগরগে না হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ও শেলি হামিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। আর ঘটনাটি এমনই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়, এ সংক্রান্ত গল্প এখনো মানুষ চর্চা করে। ১৮০২ সালে জেফারসনের গৃহপরিচারিকা শেলি তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও সন্তানের পিতৃত্ব রক্ষার দাবিতে হাজির হন। জেফারসন সব অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী সাত বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসীন হন। তখনো এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল। সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ১৮০৮ সালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শেলির অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং জেফারসন শেলির একটি সন্তানের ভরণপোষণে বাধ্য হন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমাজবিজ্ঞানী উড্রো উইলসনেরও কেলেঙ্কারি ছিল
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কেলেঙ্কারির যত ঘটনা আছে, তার মধ্যে যৌনবিষয়ক ঘটনা কম ছিল না। কল্যাণমূলক ভাবনা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমাজবিজ্ঞানী উড্রো উইলসনও কেলেঙ্কারির বাইরে ছিলেন না। তবে তার ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেও যৌন বা এরকম কিছু ছিল না। এটি ছিল কেবলই একটি এনগেজমেন্টের ঘটনা। তার প্রথম স্ত্রী এলেন লুইস অ্যাসন ১৯১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এর পরের বসন্তে উড্রো উইলসনের সঙ্গে এডি গাল্টের দেখা হয় এবং দুজনের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি ধারণা করা হয়, তাদের এনগেজমেন্ট পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে বিতর্কের সূত্রপাত ছিল এখানে- স্ত্রী থাকাকালীন থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। পরবর্তী সময়ে সেটাকে শুধু জনসম্মুখে আনা হয়। অনেকের ধারণা, গাল্টকে বিয়ে করার জন্যই প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন।