শিরোনাম
রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

কাঁচামাল আমদানি কর কমালে বাড়বে টাইলস রপ্তানি

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) আকিজ সিরামিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাঁচামাল আমদানি কর কমালে বাড়বে টাইলস রপ্তানি

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে টাইলস উৎপাদনে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে আকিজ সিরামিক। ২০১২ সালে শুরু করে এখন প্রতিদিন ৪৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা আছে প্রতিষ্ঠানটির। শুরু হয়েছিল মাত্র ২০ হাজার বর্গমিটার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে। আগামী মাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন লাইন। এতে প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হবে ৬৭ হাজার বর্গমিটার। ফলে আগামী মার্চের শেষে উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে আকিজ সিরামিক হবে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে আমাদের প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ১ লাখ বর্গমিটার হবে। আর বিক্রির হিসাবে আকিজ সিরামিকের টাইলস এখন দেশের শীর্ষ দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার পর চলতি বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষ টাইলস বিক্রি প্রতিষ্ঠান হবে আকিজ সিরামিক। ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে আকিজ সিরামিক শেষ তিন বছর ধরে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।

করোনা শুরুর পর টাইলসের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। আর টাইলসের কাঁচামালের দাম ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে...

প্রতিষ্ঠানটির নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন আকিজ সিরামিকের পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টাইলস রপ্তানি করছে, এর মাধ্যমে রপ্তানিকারকের তালিকায় নাম উঠেছে। তবে অর্থনৈতিক বিবেচনা করলে, বিদেশে টাইলস রপ্তানি সম্ভব না। কারণ টাইলসের কাঁচামালের ৯৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আসে। যে শুল্ক কর দিয়ে কাঁচামাল আনতে হয়, এরপর তৈরি করে বিদেশে পাঠাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে চীনের সঙ্গে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতায় টেকা সম্ভব না। চীন যে টাইলস আড়াই ডলারে দিতে পারে, আমাদের সেই টাইলসে খরচ ৫ ডলারের বেশি হয়। তাই বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে এত দামে পণ্য নেবে না। সরকার রপ্তানি প্রণোদনার হার বাড়িয়ে দিলে ও কাঁচামাল আমদানি কর কমিয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হবে। এতে খরচ কমবে। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভব হবে। স্যানিটারি ওয়ারের পণ্য ইউরোপের বাজার, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে পাঠানো শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনা শুরুর পর টাইলসের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। আর টাইলসের কাঁচামালের দাম ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। ১০০০-১২০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া বেড়ে ৪ হাজার ডলার হয়েছে। এটা আমাদের খরচের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। তবে খরচ বাড়ার তুলনায় দাম বাড়ানো যায়নি। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান মুনাফায় ছিল, তাদের মুনাফা কমেছে। আর যাদের লাভ-লোকসানে সমান ছিল, তারা লোকসানে চলে গেছে। জাহাজ ভাড়া যেভাবে বেড়ে গেছে, এটা সহসাই কমবে না। সামনে টাইলসের দাম বাড়াতে হবেই। না বাড়ালে এই বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এখন চাহিদা আছে। দেশে ২৮টি প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন করছে। সবার ব্যবসায়িক কৌশল এক না, দামও ভিন্ন। দেশে টাইলসের যত চাহিদা আছে, তার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি। এ জন্য দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চটা ব্যবহার করতে চায়, এ জন্য দাম কমিয়ে হলেও বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করে। আবার চাহিদার তুলনায় বেশি প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসা করছে, আরও অনেকে এই ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে না। খোরশেদ আলম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে খরচ বেড়ে যাবে। আর সরকার যদি গ্যাস নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে, তাহলে গ্যাসনির্ভর সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় কয়েক মাস ধরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে গেছে। যেহেতু আমাদের গ্যাসের মজুত তেমন নাই, তাই এলএনজির জন্য ভালো একটা উৎস বের করতে হবে। এদিকে দ্রুত নজর দিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে আকিজের টেবিলওয়্যারের পণ্য বাজারজাত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর স্থানীয় উৎপাদকরা তেমন নজর দেননি। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারও বড় আমদানিকারক খুঁজছে। এ জন্য এই বাজারে আমরা যুক্ত হয়েছি। আমরা টেবিল ওয়্যারে এখন দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ। রপ্তানি আদেশও আছে। ২০২২ সালে উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ রপ্তানি হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমাদের দৈনিক ১ লাখ ২৫ হাজার পিস টেবিল ওয়্যার উৎপাদন হবে, যা এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে। চলতি বছরের মধ্যে প্রতি বছর ৩৩ লাখ স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন হবে। টাইলসেও আকিজ চলতি বছরের শীর্ষ উৎপাদকে পরিণত হবে ইনশা আল্লাহ। এই বাজার খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এই শিল্পে এখনো দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। পণ্য বাজারজাত হচ্ছে পুরনো আদলে।  স্টিল, সিমেন্টের দাম বেড়েছে। কিন্তু টাইলসের দাম বাড়ানো যায়নি। ক্রেতারা প্রস্তুত, প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ক্ষেত্রেই আরও উৎকর্ষ দেখাতে হবে।

সর্বশেষ খবর