২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১২:৫৮

হারিয়ে যাচ্ছে হাড়ি-পাতিলে ধানসিদ্ধ করার দৃশ্য

আবদুল বারী, নীলফামারী

হারিয়ে যাচ্ছে হাড়ি-পাতিলে ধানসিদ্ধ করার দৃশ্য

আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য হাড়ি-পাতিলে ধানসিদ্ধ করার দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এক সময় গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত ধানসিদ্ধ করার পাতিল। তবে বর্তমানে কালের বিবর্তনে নীলফামারীর গ্রামীণ নারীদের হাড়ি পাতিলে ধানসিদ্ধ করার দৃশ্য হারিয়ে যাচ্ছে। 

ধান সিদ্ধ করার আগে মাটির বড় বড় হাড়ি বা চারিতে ধান ভিজিয়ে রাখা হত। ধান সিদ্ধ করার জন্য বানানো হতো মাটির চৌকা বা তিনকোন বিশিষ্ট ইটের টিরা। এর ওপরে বসানো হতো ২০ থেকে ৪০ কেজি পরিমাপের পিতল কিংবা সিলভারের পাতিল। চুলায় আগুন জ্বালানো হতো তুষ ও খড় দিয়ে। সে আগুনে রাঙা হয়ে ওঠতো গায়ের কিষাণ বধূর মুখ। শীত আর কুয়াশা যতই তীব্র হোক না কেন গভীর কিংবা শেষ রাতে শুরু হত ধান সিদ্ধ করার পালা। পরে সিদ্ধ করা ধান মেলে দেয়া হতো রোদে। ৩ থেকে ৪ দিনেই শুকানো হত ধান। যা কৃষকের সারা বছরের খোরাকি। ধান ভিজানো, সিদ্ধ এবং শুকানোর এমন দৃশ্য গ্রামীণ জীবনের এক অনবদ্য চিত্রকল্প বহন করত।

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং কলকারখানার কারণে গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণী বধূরা আর পাতিলে ধান সিদ্ধ করে না। এতে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার অনবদ্য দৃশ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামে ধান সিদ্ধ-শুকানোর এমন চিত্র দেখা যায়। ধান সিদ্ধ কাজে নিয়োজিত গৃহবধূ মোসলেমা বেগম বলেন, আগে প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে ফসল কাটার মৌসুমে ধান কাটা থেকে শুরু করে সিদ্ধ-শুকানো ও নবান্নের উৎসব চলতো। ধান সিদ্ধ-শুকানোর কাজ মহিলারাই করত বেশি।

উপজেলার আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে ধান সিদ্ধ, শুকানো, ভাঙ্গানোর ঝামেলা এড়াতে সবাই বাজারে অটো রাইস মিলের চালের দিকে ঝুঁকছেন। অটো রাইস মিলের ধবধবে পালিশ করা চালের পুষ্টিগুণ কম। এ চাল ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তবে সিদ্ধ করা ধানের ঢেঁকি ছাটা চাল সু-স্বাদু ও পুষ্টিগুণ বেশি। যেহেতু বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। এক্ষেত্রে ঢেঁকিছাঁটা চাল ঝুঁকিমুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এখন ধান সিদ্ধ-শুকানো ও ভাঙ্গানোর যান্ত্রিক পদ্ধতি আসায় প্রাচীণ আমলের সেই ধারা আর তেমন চোখে পড়ে না। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত 

সর্বশেষ খবর