মাসের শুরুতেই মোবাইলে চলে যায় পড়ার খরচ। সেই টাকায় হলে থাকা ও শিক্ষাউপকরণ কেনার পাশাপাশি ভাবনাহীন পড়ালেখা। প্রতি মাসে বৃত্তি দিয়ে অতি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে তাঁদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখছে দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল কলেজ কিংবা নার্সিং ইনস্টিটিউটে পড়া এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে মহানুভবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বৃত্তি পাওয়া কয়েকজন আদিবাসী শিক্ষার্থী ও নার্সিং পড়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান
মায়ের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ
ছামিয়া আক্তার
তৃতীয় বর্ষ, গুলশানারা নার্সিং কলেজ
নার্সিং একটি মহৎ পেশা। সেবামূলক এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এখনো নার্সিংপড়ুয়া হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার পেছনে রয়েছে কঠোর লড়াই ও সংগ্রাম। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের তিন ভাইবোনের মধ্যে মেজো আমি। বড় বোন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছোটভাই নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় কিছুটা মনোযোগী হওয়াতে বাবা-মায়ের আমাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। মায়ের অনেক ইচ্ছে ছিল আমি একজন নার্স হব। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর কোনো রকম কোচিং ছাড়াই বিএসসি ইন নার্সিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সরকারিতে হয়নি। মা আর বোনের ইচ্ছায় ভর্তি হয়ে গেলাম প্রাইভেট নার্সিং কলেজে। টিউশনি করে বেতন দিতাম, বাবা কোনোরকমে দিতেন বাসা ভাড়া, আর বোন টিউশনি করে দিতেন সেমিস্টার ফি। এভাবেই মিলেমিশে পড়াশোনার খরচ চলছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আমার মায়ের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এই ঝড়ে আমার পরিবার ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। মায়ের কান্নাভরা চোখ, আমার ছেলেমেয়ে আর অচল স্বামীর কী হবে? বলে রাখা ভালো, আমার বাবার হাত এবং পা ভেঙে গিয়েছিল এক্সিডেন্টে, যখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি, কিন্তু আমার বাবার ইচ্ছেশক্তি উনাকে আবার দাঁড় করিয়েছে। মায়ের ক্যানসারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। চতুর্থ ক্যামোথেরাপি দেওয়ার আগে মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাকে কবরে রেখে ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা দিয়েছিলাম। ভিতরটা আমার খাঁখাঁ করছিল। মায়ের চিকিৎসায় খরচ করে আমরা পুরো নিঃস্ব হয়ে যাই। পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। আমার পড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আল্লাহপাকের অশেষ দয়ার উসিলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ। কথায় আছে, আল্লাহ কোনো উসিলায় বিপদ উদ্ধার করেনই। আমার বিপদে উসিলা হয়ে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সবার বিপদে সহায়তা করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তির জন্য আমার পড়াশোনার খরচ চালানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। বসুন্ধরা শুভসংঘকে ও বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, যারা আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণে আমার পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নৈশপ্রহরী থেকে আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র
উহ্লাচিং মারমা
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তি পাওয়া একজন ছাত্র আমি। আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনের সঙ্গে বসুন্ধরা শুভসংঘ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার পড়াশোনায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তারা আমাকে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করে না দিলে জীবনটা অন্যরকম হতো। খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে উঠে আসার গল্পটি এত সহজ ছিল না। পড়ালেখার অধ্যায় শুরু হয়েছিল নানুর বাড়ি থেকে। আমার জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়ার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি আমার বাবা। হঠাৎ বাবার শরীরে ধরা পড়ে এক মারাত্মক রোগ। শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়লে ভারতে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দেন। বাবার কিছু ফসলি জমি ছিল সেটা বিক্রি করে এবং মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। এরপর আমাদের পরিবারে প্রচুর অর্থ সংকট দেখা দেয়। বাবা আবার চাকরি করতে শুরু করেন। মানুষের ঋণ পরিশোধ এবং পরিবারের হাল ধরার জন্য। আমিও পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজের খরচের জন্য প্রাইভেট পড়াতাম। যখন কলেজে পড়ি, বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে পড়েন। বাবার চাকরিটা আমাকে দেওয়া হয়। চাকরি করার সময় পড়াশোনায় তেমন মন বসত না। সারা রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আবার সকালে এসে ঘুমিয়ে যেতাম। কারণ আমি একজন নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করতাম। সারা রাত কাজ করার পর যখনই সময় পেতাম যে কোনো জায়গায় বসে পড়াশোনা করতাম। কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখি। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। বাবা-মাকে বললাম আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। মা বললেন, ‘আমি জানি তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাও। কিন্তু কী করব তোমার বাবার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তোমার বাবার চিকিৎসার খরচ কে চালাবে?’ আমি থেমে থাকিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম আর চাকরির প্রেসার, কষ্ট সহ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে চান্স পাই। আমার জীবন সংগ্রামের গল্প শুনে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাশে দাঁড়ায়। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে আমার পড়ালেখায় সম্পূর্ণ খরচ চালানোর জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দেয়। যা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে বসুন্ধরা শুভসংঘ পিতার মতো সহযোগিতা করে যাচ্ছে যেটা না বললেই নয়। অসংখ্য ধন্যবাদ বসুন্ধরা শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে আমার মতো ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মানুষের সেবা করব
মারিয়া আক্তার
তৃতীয় বর্ষ, গ্রীণ লাইফ কলেজ অব নার্সিং
আমি অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে। যখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি বাবা আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান। ছোট ছিলাম বলে এতকিছু বুঝতাম না। বাবা না থাকার কষ্ট কেমন জানতাম না। যখন বড় হলাম, চারদিকের পরিবেশ বুঝতে শিখলাম তখন বাবার জন্য মন খারাপ হতো। প্রাথমিকের পড়াশোনা নিজের বাড়িতে করলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক আমার নানার বাড়িতে থেকে করেছি। আমার লাইফের সুপার ওমেন হলেন আমার মা। কারণ বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে ছেড়ে কোথাও যাননি বরং পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মা না থাকলে হয়তো আমি কখনই এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে মানুষের সেবা করব। যখন মাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, মায়ের কষ্টটা অনুভব করেছি, তখন ভেবেই নিয়েছি আমাকে কিছু করতেই হবে। মা আমাকে নার্সিং পড়ার স্বপ্ন দেখান। নার্সিং পড়ার বিষয়টা ভালোই মনে হয়েছিল কেননা এর থেকে আমার স্বপ্ন পূরণ ও মায়ের পাশে দাঁড়ানো দুটোই করতে পারব। সিদ্ধান্ত নিই আমি নার্সিংই পড়ব। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশে অচেনা শহরে পা রাখি। নার্সিং অ্যাডমিশন দিই। গভর্মেন্টে সুযোগ আসেনি। আমার মন ভেঙে যায়। কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য পাশে দাঁড়ান শ্রদ্ধেয় ডা. এবিএম আবদুল্লাহ স্যার। তিনি আমাকে প্রাইভেট নার্সিং কলেজে অ্যাডমিশন করিয়ে দেন এবং আমার পড়াশোনায় সাহায্য করেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে পাওয়া বসুন্ধরা গ্রুপের এ বৃত্তি আমার পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করে। আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে অবদান রয়েছে আবদুল্লাহ স্যার ও বসুন্ধরা শুভসংঘের। তারা যদি আমার পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যেত। কখনই নার্সিং পড়া হতো না। আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই ডা. এবিএম আবদুল্লাহ স্যার ও বসুন্ধরা শুভসংঘকে, আমার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
আমার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে বসুন্ধরা গ্রুপ
চাইওয়াপ্রু মারমা
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। তাঁরা উভয়েই খুবই পরিশ্রমী, সৎ এবং নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের প্রতীক। আমরা চার ভাইবোন। সবাই পড়াশোনা করছি। বাবা পরিবারের একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী। আমাদের চার ভাইবোন যত বড় হচ্ছি তত আমাদের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের পরিবার আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। এসব আর্থিক সংকটের কারণে আমার পড়াশোনার পথটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পথচলায় অর্থনৈতিক সমস্যা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তবুও থেমে যাইনি। পড়াশোনা করেছি নানা অভাব-অনটনের মাঝেও। দায়িত্বশীল পিতামাতার উৎসাহ ও ভালোবাসা এবং নিজের স্বপ্ন ধরে রাখার চেষ্টা আমাকে আজ এখানে এনে দিয়েছে। আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী। আমার এই কঠিন পথচলার মাঝে স্বস্তি জুগিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা শুভসংঘ বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমাকে প্রতিমাসে পড়ার খরচ দিচ্ছে। তাদের দেওয়া এ বৃত্তি শুধু আমার পড়াশোনার খরচ সামলাতেই সাহায্য করেনি, এটা আমার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এ জন্য আমি বসুন্ধরা শুভসংঘ এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে নিজের পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য কিছু করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, ছোট জায়গা থেকে বড় স্বপ্ন দেখা যায়, যদি পাশে থাকে সঠিক মানুষ আর নিজের অটুট ইচ্ছাশক্তি।
এ উপকারের জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব
ফারজানা আক্তার
দ্বিতীয় বর্ষ, নার্সিং ইনস্টিটিউট জয়পুরহাট
আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে, আমার খারাপ সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্যই আমি পড়াশোনা ভালোভাবে করতে পারছি। আমার বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। আমি আর আমার ভাই পড়াশোনা করি। ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বাবা-মা আমার পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করেন। এমনও হয়েছে বাসায় রান্না হবে, কিন্তু ঘরে কোনো চাল নেই। বাবা ভাবছেন ওই দিনের কাজের টাকা দিয়ে চাল কিনবেন। আমি বাবাকে বললাম, আমার বই লাগবে। বাবা কোনো কিছু না ভেবেই সেই টাকায় আমাকে বই কিনে দিয়েছেন। ২০২৪-এ সব খারাপ সময় একসঙ্গে আসতে লাগল। মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিনে ৩০০ টাকার ওষুধ লাগত। বাবা যেহেতু দিনমজুর তাঁর কাছে প্রতিদিন ৩০০ টাকার ওষুধ কেনা অনেক কষ্টসাধ্য। বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন। আবার বাসা ভাড়া। আমাদের দুই ভাইবোনের পড়ার খরচ তো আছেই। এত কিছু বাবা কেমন করে সামলাবেন? চিন্তায় চিন্তায় বাবা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউ কল করলে ধরত না। কল করলেই মনে করত টাকার জন্য কল করেছি। আমার সেই খারাপ সময়ে প্রকৃত বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সেই থেকে প্রতিমাসে আমাকে বৃত্তি দিয়ে সহায়তা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। মাসে মাসে যে বৃত্তিটা পাই সেই টাকা দিয়ে খুব ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। আমার আর কোনো অসুবিধা হয় না পড়াশোনা করতে। আপনাদের এই উপকারের জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
সত্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাথমিকে পড়ার সময়টা বেশ আমার সুন্দরভাবে কেটেছে। সেখানে কোনো ফি দিতে হতো না। এজন্য বাবা-মায়ের টাকা পয়সার জন্য কোনো হিমশিম খেতে হয়নি। যখন মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম তখন থেকেই শুরু হলো টাকা পয়সার জন্য হিমশিম খাওয়া। দিন দিন সেটা বাড়তে লাগল। এসএসসি পাস করলাম নিজ উপজেলার একটি স্কুল থেকে। বাবা-মা আর দিদির প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিল আমাকে শহরের কলেজে পড়াবেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে। একে তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে আমাকে চালানো তো এক বিলাসিতার ব্যাপার! কিন্তু বাবা-মা আর দিদি হার মানেননি। অনেক কষ্টে আমাকে টাকার জোগান দিয়েছিলেন। একে একে দুটো বছর কেটে যায়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায়। আমার আর পরিবারের সবার ইচ্ছা ছিল আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু টাকা পয়সা না থাকায় কোচিং করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড়ভাই আমাকে চবিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটা ফ্রি কোচিং সেন্টারের কথা বললেন। কোচিং সেন্টারটির নাম ‘জুম একাডেমি’। কোচিং সেন্টারটি আমার ইচ্ছে পূরণ করে দিয়েছে। আমি সেখানে কোচিং করি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর উপলব্ধি করতে পারি, আমাদের মতো হিমশিম খাওয়া পরিবারের পক্ষে মাসে এত টাকা চালানো কঠিন। তখন মাথায় চিন্তা চেপে বসল আমি কি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারব? ভগবানের দূত হিসেবে এ চিন্তার অবসান করে দিল বসুন্ধরা শুভসংঘ। উনারা আমার পড়ালেখার খরচ বহন করার দায়িত্ব নিলেন। আমি সত্যি এই খুশিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না! বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া বৃত্তির কারণে আজ আমার চিন্তার ভার লাঘব হয়েছে।