সজীব কান্তি চাকমার জীবনটা যেন সিনেমার কাহিনিকেও হার মানাবে। শৈশবে মাকে হারিয়েছেন। পরে বাবা নতুন সংসার পেতেছেন। তিনি বড় হয়েছেন দাদু-দাদির কাছে। তাদের সংসারেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবু নাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। বলতেন, ‘যত কষ্টই হোক, পড়াশোনা ছেড়ো না দাদু।’
সজীবও চেয়েছেন যত কষ্টই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। তাই স্কুলের ফাঁকে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন। নিজের খরচ চালিয়ে দাদুর সংসারেও দিতেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটা সুতার কারখানায় কাজ করেছেন। মাটিও কাটতে হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজও করেছেন। এভাবে অভাবের সঙ্গে লড়েই এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন।
শৈশব থেকে পাওয়া অপমান, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর ঘাত-প্রতিঘাত পেছনে ফেলে ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেছেন সজীব। ভর্তি হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে।
৯ নভেম্বর তার জীবন সংগ্রামের গল্প ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠ’র প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অন্য জীবন’ বিভাগে। শিরোনাম, ‘বাধার পর্বত পেরোলেন পাহাড়ের সজীব’। আলোচিত প্রতিবেদনটি পড়ে অসংখ্য মানুষ স্যালুট জানিয়েছিল খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার শিলাছড়ি গ্রামের এই তরুণকে।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তখনো শঙ্কার মেঘ কাটেনি সজীবের। আপাতত একটা মেসে উঠেছেন। তখন তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়েই যত দুশ্চিন্তা।’
অদম্য এই তরুণের সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে সজীবের পড়াশোনার ব্যয় বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রধান ইমদাদুল হক মিলন বললেন, ‘কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানলাম, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সজীব কান্তি চাকমা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তার পড়াশোনার খরচ আমরা চালাব।’
সংগঠনটির পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘সজীবের উঠে আসার গল্প সিনেমাকেও হার মানায়। আমরা তার পাশে আছি।’
এই খবরে দারুণ খুশি সজীব কান্তি চাকমা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ চালানো নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। এখন আমার স্বপ্নের পথে আর্থিক বাধা থাকল না। মা শুনলে কী যে খুশি হতেন! বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।’
বিডি প্রতিদিন/ইই