‘আমি সাদিয়া আক্তার। এত দিনে হয়তো বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতাম। আরো কত কি হতো। অতিদরিদ্র বাবার পক্ষে আমাকে পড়ালেখা করানো সম্ভব হচ্ছিল না। এর মধ্যে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা কাজ খুঁজছিলাম। চার ভাইয়ের মধ্যে আমি একমাত্র বোন এবং সবার বড়। বাবা-মা বলতেন আমি ডাঙর (বড়) হইতাছি, পড়ালেখা করা লাগবে না। এই বয়সে নাকি মেয়েদের শ্বশুরবাড়িই আসল জায়গা।
কথাবার্তাও চলছিল। এর মধ্যে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়াল বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আমাকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমাকে একটা সেলাই মেশিন দেয়।
এই সেলাই মেশিন পেয়ে আমার জীবনের সব কিছু পাল্টে গেছে। আমি এখন স্বপ্ন দেখছি কলেজে ভর্তি হওয়ার। পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে এখন নিজের ভবিষ্যতের পুঁজি জমা করছি। টাকার অভাবে এক বছর পড়ালেখা বাদ দিয়েছিলাম। সেলাই মেশিনে আয়ের সেই টাকায় আবার পড়া শুরু করেছি। এখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। আগামী এপ্রিলে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেব। টেস্ট পরীক্ষায়ও ভালো ফল করেছি।’
কেমন আছেন সাদিয়া এটি জানতে তাঁর বাড়িতে গেলে এসব কথা জানা যায় এবং দেখা যায়, পড়াশোনার পাশাপাশি একটা সময়ে তিনি সেলাই মেশিনে কাজ করছেন। অর্ডারি কাপড় তৈরি করছেন। নীরবে-নিভৃতে নিজ ঘরের এক কোণে জানালার পাশেই বসানো সেলাই মেশিনে কাজ করছেন তিনি। পাশেই তৈরি করা অনেক পোশাক। কাস্টমার নির্ধারিত সময়ে নিয়ে যাবে। প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। সাদিয়া জানান, পরীক্ষা সামনে থাকায় এখন পড়ালেখায় মনোযোগ দিয়েছেন। তার পরও ফাঁকে ফাঁকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেলাই মেশিনের এই আয় দিয়েই তিনি ফরম পূরণ করবেন। পড়ছেন প্রাইভেটও। আগে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতেন। এখন নিজের আয় দিয়েই ইজি বাইকে করে বিদ্যালয়ে যান। এতে তাঁর অনেক আনন্দ হয়। পড়ালেখার মধ্যেও নিজের আয় হচ্ছে এটি ভেবে তিনি অনেক খুশি। তিনি বলেন, ‘এখন আর বাবা বিয়ের কথা বলেন না। ভালো করে পড়তে বলেন, একটি চাকরি করতে বলেন। এই পথেই আমি আছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার এই পথ তৈরি করে দিয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ