ক্লাস শুরুর দীর্ঘ ৬ মাস পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের (৪৭ তম আবর্তন) বহুল আকাঙ্খিত প্রবেশিকা অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীদেরকে বরণ করে নেয়ার পাশাপাশি দেশ ও মানুষের কল্যাণে বেড়ে উঠার জন্য দিক-নির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা প্রদান করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির চলমান শিক্ষক রাজনীতির কারণে এই অনুষ্ঠানটিও এখন বিপদের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। প্রবেশিকা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি দল। আগামীকালের অনুষ্ঠানকে ঘিরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে তাই আশংঙ্কা করা হচ্ছে বিশৃঙ্খলার। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে শিক্ষক রাজনীতি করবেন শিক্ষকরা এমনটাই দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
উপাচার্য পদকে কেন্দ্র করে জাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকদের দল ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’। অন্যটি হলো সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’। এটি ‘উপাচার্য বিরোধী’ শিক্ষকদের গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। গ্রুপ দুটির চলমান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন পূর্বে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
উপাচার্য বিরোধী গ্রুপের শিক্ষকরা ৬ দফা দাবিতে আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলা অবরোধে বন্ধ ছিল সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম। যে ৬ দফা দাবিতে তারা অবরোধ পালন করছে সেগুলোর অন্যতম হলো- আইন অনুষদের নবনিযুক্ত ডিনকে অপসারণ। তারা তাদের দাবিতে বর্তমান ডিনকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে তাকে আজকের মধ্যে অপসারণের আল্টিমেটাম দেয়। তা না হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য প্রবেশিকা অনুষ্ঠান যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে বলে জানায়।
তবে যে কোনো মূল্যে শিক্ষার্থীদের এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা। বুধবার বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো নুরুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে যে অনুষ্ঠান তা প্রতিহত করার কর্মসূচি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।”
আইন অনুষদের নবনিযুক্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ লিখিত বক্তব্যে জানান, উপাচার্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ মেনেই নিয়োগ দিয়েছেন। ফলে আইন অনুষদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অনুষদগুলোর জন্য পরবর্তী ডিন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তাকে অপসারণ করে নতুন ডিন নির্বাচনের সুযোগ নেই।
প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “তাদের যদি পছন্দ না হয় তবে তারা এই অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে যে অনুষ্ঠান তা প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অনৈতিক”।
উল্লেখ্য, উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা যে সকল দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন তা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ, প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব প্রদান, উপাচার্যের অধ্যাদেশ, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি ‘লঙ্ঘনের’ প্রতিবাদ, উপাচার্য প্যানেল ও জাকসু নির্বাচন এবং শিক্ষক ‘লাঞ্ছনা’র বিচার।
বিডি প্রতিদিন/২৫ জুলাই ২০১৮/হিমেল