রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আনুষ্ঠিনকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপ-সচিব হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত বছরের ১৬ জুলাই প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে ৪ বছরের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপ উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি এখনো দায়িত্বে আছেন। আর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ১৩তম উপ-উপাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম একই সঙ্গে দুজন উপ উপাচার্য দায়িত্ব পেলেন।
নতুন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়া ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়ন বিভাগ প্রভাষক পদে যোগদান করেছিলেন। ১৯৯২ সালে অক্টোবর মাসে তিনি সহকারী অধ্যাপকে পদোন্নতি পান। ১৯৯৭ সালের জুন মাসে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে অধ্যাপক পদমর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০০১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি রিডার এবং ২০০৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত জাপানের নগোয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন অধ্যাপক জাকারিয়া। ১৯৭৯ সালে তিনি রাজশাহী বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৭৭ রাজশাহী বোর্ডের অধীনে একই বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বিএসসি (সম্মান) পাস করেন। ১৯৮৪ সালে একই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়ে এমএসসি (মাস্টার্স) সম্পূর্ণ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক জাকারিয়া পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলো ডিগ্রী অর্জন করেন।
শিক্ষকতা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অধ্যাপক জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যের দায়িত্বে আছেন। ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৯৮৯ সালের মার্চ পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসক, ১৯৮৯ সালের মার্চ মাস থেকে একই বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি খুলনা জেলার পিকগঞ্জ উপজেলায় সহকারী কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮-২০০০ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক জাকারিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের হাউস-টিউটর ও প্রোভেস্ট, ২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের কেমিক্যাল সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ, ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত কেমিক্যাল সোসাইটর সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৪ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক জাকারিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন।
ছাত্র ও শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বিভাগ অর্জনের জন্য মাধ্যমিক স্কুল বোর্ড বৃত্তি, ১৯৮৩ এর ফলাফলের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধার বৃত্তি, ১৯৮৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের প্রথম পদমর্যাদা অর্জনের জন্য বিশেষ মাননীয় চ্যান্সেলর পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্নাতকোত্তর স্টাডিজের জন্য ওআরএস পুরস্কার এবং ১৯৯৬ সালে সেরা গবেষণা পত্র উপস্থাপনের জন্য "বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (বিএএএস) পুরস্কার, ২০০০-২০০১ সালে কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ, ২০০৩-১২ সাল পর্যন্ত পদার্থ বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের নিয়মিত সহযোগী সদস্য ও ২০০৩-০৪ সালে জাপানের নাগোয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ভেনচার বিজনেস ল্যাবরেটরি (ভিবিএল) পুরুস্কারে ভূষিত হন।
এদিকে আজ উপ উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের সময় চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ড সুচারুভাবে পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় উপ-উপাচার্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। সেই গুরু দায়িত্বটা আমার উপর এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্ব আমার উপর আসবে আমি সর্বোচ্চ দিয়ে তা পালন করার চেষ্টা করব।
দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজের পরিধিও। কিন্তু প্রশাসনে কর্মকর্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতি কমে যাচ্ছে বাড়ছে ভোগান্তি। এই ভোগান্তি কমানোর জন্য আমি সরকারের কাছে দ্বিতীয় উপ উপাচার্যের আবেদন করি। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরো একজন উপ উপাচার্য দিয়েছেন। আমি আশা করছি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজ অতি দ্রুত সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান