জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কর্মচারী (ড্রাইভার) আলমগীর হোসেনের জামাতা মনির সরদারকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের ৫ কর্মীর বিরুদ্ধে।
ছিনতাইকালে তিন ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের কাছে ধরা পড়লেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অপর দুই ছাত্রলীগকর্মী। আটক করার পর ছাত্রলীগকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টিরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করেন কর্মচারীরা।
শনিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে এই ছিনতাই ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আটককৃত তিন ছাত্রলীগ কর্মী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৪ তম ব্যাচের সঞ্জয় ঘোষ, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের রায়হান পাটোয়ারী এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল রাজী।
এছাড়া পালিয়ে যাওয়া দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শাহ মুসতাক সৈকত ও দর্শন বিভাগ ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোর্কারম শিবলু। এদের মধ্যে রায়হান পাটোয়ারী পূর্বের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সঞ্জয় ঘোষ, রায়হান পাটোয়ারী ও আল রাজীও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী। এছাড়া মোর্কারম শিবলু বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের ফুফাতো ভাই ও ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া সৈকতও চঞ্চলের অনুসারী।
ভূক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্প্রতি মনির সরদার বিশমাইলে তার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। শনিবার ভোরে তিনি ঢাকায় চাকরির স্থলে যোগদানের জন্য বিশমাইল এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এমন সময় অভিযুক্ত ৫ ছাত্রলীগকর্মী তার সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। আত্মরক্ষার জন্য দৌড় দিলে অভিযুক্তরা তাকে আবারো আটক করে একটি ইজিবাইক যোগে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে তারা তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন এবং বেধড়ক মারধর করেন। পরে তারা মনিরের স্ত্রীর কাছে মুঠোফোনে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। খবর পেয়ে মনিরের শ্বশুর বাড়ির লোকজন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে যান। এসময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের তিনজনকে আটক করা গেলেও শিবলু ও সৈকত পালিয়ে যায়। আটককৃত ৩জনকে প্রথমে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যান কর্মচারীরা। সেখান থেকে তাদেরকে প্রক্টর অফিসে নেওয়া হয়। আর ভূক্তভোগী মনির সরদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘আমি জুনিয়রদের ফোন পেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে যাই। আমি বিষয়টি জানতাম না। গিয়ে দেখি, ওরা তাকে মারধর করেছে। তবে ছিনতাই ও মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনেরও দায়িত্ব আছে। তবে আমি সঞ্জয়কে ছাড়া বাকিদের চিনিনা।’
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। আগামীকাল বিকেলে জরুরী ডিসিপ্লিন বোর্ড বসবে। তারপর কালকেই সিন্ডিকেট বসবে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দিন