১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ২০:৫২

'নিজ ঘরে' সম্মান পেলেন না রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

'নিজ ঘরে' সম্মান পেলেন না রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের দুই দিনব্যাপী প্রথম পুনর্মিলনী অনুিষ্ঠত হয়েছে গত ১৭-১৮ জানুয়ারি। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিভাগের প্রতি অবদান এবং দেশের প্রতি অবদানের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রওশন আলী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানে সম্মাননা স্মারকে রাখা হয়নি ওই বিভাগের শিক্ষক শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমকে। কেন রাখা হলো না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং উদযাপন কমিটির সদস্যবৃন্দরা।

আবার অনেকেই বিভাগীয় সভাপতিকে বিএনপি জামায়াতের কর্ণধার আখ্যা দিয়ে তিনি ইচ্ছে করে তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন বলে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। মীর আব্দুল কাইয়ুমকে সম্মাননা স্বারক কেন দেয়া হয়নি তা নিওেয় প্রশ্ন তুলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের শিক্ষকরা। অনেকেই এ প্রশ্ন তুলে প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান বর্জন করে অনুষ্ঠানে আসেননি। 

তবে এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ও ১ম পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এনামুল হক বলেন, ‘পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই বাস্তবায়িত হয়েছে। এখানে আমার নিজস্ব কোন মতামতের ভিত্তিতে হয়নি।’

তবে পুনর্মিলনী উদযাপন কিমিটির সদস্য ড. মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘একাডেমিক কমিটিতে সম্মাননা স্বারক কাদের দেয়া হবে এটা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তবে দুজন ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয় হবে এ বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা বলেছিলেন।’

তিনি আরও দু:খ প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু এর আগে শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম স্যারকে বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন সম্মাননা দেয়া হয়নি। সেই প্রেক্ষিতে বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সম্মানানা দেয়া অবশ্যই উচিৎ ছিল। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনকারী একজন শিক্ষক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, 'শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম অবশ্যই স্বীকৃতি বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিভাগ এবং উদযাপন কমিটি কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে ওনাকে সম্মানিত করতে পারলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানিত হতো বলে আমি মনে করি।'

মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, আমি উদযাপন কমিটির সদস্য না এবং আমি জানিও না এটা কারা করেছে তবে আমি এ উদযাপন কমিটিকে ধিক্কার জানাই। আমার বাবার যে অবদান সেটি বুদ্ধিজীবীর পরিবার হিসাবে আমরা গর্ববোধ করি। এখন তাকে যারা অমর্যাদা করেছে আমি মনে করি তাদের এটা মানসিক দৈনতা। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, 'শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম বাংলাদেশ এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্ব। এখন বিভাগ কিসের ভিত্তিতে সম্মাননা প্রদান করেছে আমার জানা নেই। সেজন্য আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।'

প্রসঙ্গত, শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫শে নভেম্বর রাজশাহী শহরের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে পদ্মার চরে অন্যদের সাথে জীবন্ত কবর দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর