সুনামগঞ্জের শাল্লার নায়োগাঁও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শনিবার সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।
এছাড়া সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের আলোচনায় হেফাজত নেতা ফয়জুল্লাহর ‘জাতীয় সংগীত নতুনভাবে রচনা’র বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতা’ আখ্যা দিয়ে এর শাস্তির দাবিও জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় যে, হেফাজতে ইসলামের উগ্রবাদী নেতা মামুনুল হকের অনুসারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের সাথে জড়িত। ১৫ মার্চ সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় অনুষ্ঠিত হেফাজতের সভায় মামুনুলের উস্কানিমূলক বক্তব্য তার নেতাকর্মীদের আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করেছে।
শাল্লার নায়োগাঁও-এর জুমন দাস নামের এক যুবক ঐদিন রাতে মামুনুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয় বলে গুজব ছড়িয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে রাতেই মামুনুল হকের অনুসারীরা জুমন দাস ও তার পরিবারের উপর হামলার মহড়া দেয়।
উল্লেখ্য, জুমন দাসের ফেসবুক হ্যাক করে পরিকল্পিতভাবে পোস্টে দিয়ে ধর্মীয় উস্কানির অপপ্রচার করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এখানে আরও স্মরণযোগ্য, রামু ও নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার আগেও এ ধরনের ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতি যখন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে, সেই সময়ে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করে মামুনুলের অনুসারীরা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে একটি সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে; যা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি মামুনুলদের উস্কানিতে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এদের কেউ কেউ জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। হেফাজত নেতা ফয়জুল্লাহ একটি গণমাধ্যমের আলোচনায় জাতীয় সংগীত নতুনভাবে রচনার যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান পরিপন্থী।
মামুনুল ও ফয়জুলের অনুসারীরা তাদের রাষ্ট্র ও সংবিধান বিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে তারা ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা। তারা শান্তির ধর্ম ইসলামের অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত।
বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ হামলার শিকার পরিবারসমূহের ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তা এবং ধর্ম, মানবতাবিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানায়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর