বরিশাল বিএম কলেজের মসজিদ গেট এবং শহীদ মিনার গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকলে যে কারোর চোখ আটকে যাবে। মসজিদ গেট দিয়ে ঢুকলে বামে এবং শহীদ মিনার গেট দিয়ে ঢুকলে ডানে নানা রংয়ের দৃষ্টিনন্দন ফুল দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে যে কারোর। ফুলের সৌন্দর্য্যে কিছু সময়ের জন্য হলেও থমকে দাঁড়াবে দর্শনার্থীরা। প্রথম দর্শনে স্বপ্নপুরিও মনে হতে পারে। ৪২ ধরনের বাহারী ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে বিএম কলেজ ক্যাম্পাস। ফুল বাগানটি আরও সম্প্রসারণ করে মনোমুদ্ধকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া।
ফুল বাগানটির অবস্থান ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বিশাল ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। ২০১০-১১ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশাল আয়তন নিয়ে ফুল বাগান করা হয়। ২০১২ সালের দিকে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের উদ্যোগে বিএম কলেজ রোড সম্প্রসারণের কারণে ফুল বাগানের আয়তন ছোট হয়ে যায়। বর্তমানে চারিদিকে পাকা সিমানা প্রাচীর এবং উপরিভাগে লোহার গ্রীল দিয়ে ঘেরা ১৫ শতাংশ আয়তনের ফুল বাগানটি বিএম কলেজের প্রাণ বলা যায়। ক্যাম্পাসে ফুল বাগান সহ বৃক্ষ রোপণের কারণে ২০১২ সালে জাতীয়ভাবে বিএম কলেজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় এবং ২০১৫ সালে তৃতীয় পুরস্কার পায় বলে জানিয়েছেন তৎকালীন বাগানের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক শাহ সাজেদা।
বর্তমানে ফুল বাগান তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ৪২ ধরনের ফুল গাছ রয়েছে বাগানে। বাগানের বেশিরভাগ ফুল ফোঁটে শীত মৌসুমে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুলের হাঁসি লেগেই থাকে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে।
উল্লেখযোগ্য ফুলের মধ্যে লাল, হলুদ ও সাদা বাগান বিলাস, কনকচাপা, নয়নতারা, জবা, কাঞ্চন, বোতাম ফুল, গন্ধরাজ, অপরাজিতা, কলাবতি, রজনীগন্ধা, ঝুমকা লতা, রঙ্গন, সূর্য্যমুখি, হাসনাহেনা, করবী, গোলাপ, মোরগফুল, কসমস, কৃষ্ণচুড়া, গাঁধা, ইনকা ও কালো গাঁধা, টাইম ফুল, জিনিয়া, দোপাটি, চন্দ্র মল্লিকা, এলামান্ডা, কুঞ্জলতা, লিলি, ডালিয়া, স্যালভিয়া, চেরি, ল্যানটানা, ঢায়ানতাস, স্টার, কাটা মুকুট, পাথরকুঁচি, শেফালী, স্ট্র ফ্লওয়ার এবং হুরহুরে।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, বিএম কলেজের ফুল বাগানে দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের সমাহার ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে স্ট্র ফ্লওয়ার সহ বিদেশী বিরল প্রজাতীর কিছু ফুল রয়েছে। গাজীপুরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, স্বরূপকাঠীর অলঙ্কারকাঠীর বিভিন্ন নার্সারী, নগরীর কাশীপুরের বিভিন্ন নার্সারী সহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জাতের দুষ্প্রাপ্য ফুলগাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষি নিয়ম মেনে ফুলগাছগুলো রোপণ করায় রোপণের অল্পকিছুদিন পরই সেগুলো বেড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সেগুলোতে ফুল ধরতে থাকে। শীত মৌসুমে বাগানের সব ফুল ফোঁটে। তবে বছরের অন্যান্য সময়ও কিছু ফুল ফুঁটেই থাকে। ফুলবাগান পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিক একজন মালি নিয়োগ করা হয়েছে।
ফুল বাগান পরিচর্যাকারী বিএম কলেজের মালী সুনীল দাস বলেন, এই বাগানের বেশিরভাগ ফুল গাছ তার নিজের হাতে লাগানো। জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে প্রতিটি ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। পোকামাকর থেকে রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে গাছের গোড়ালীর মাটি কুপিয়ে ঝুড়ঝুড়ে করে দেয়া, আগাছা পরিস্কার করা এবং প্রতিদিন গাছেরর গোড়ায় পানি দিতে হয়। নিজের হাতে গড়া ফুল বাগান দেখে তিনি নিজেও বেশ পুলকিত হন। তবে বাগানের গাছে আরও সার এবং কীটনাশকের প্রয়োজন। আরও বেশি সার দিয়ে বাগানের পরিচর্যা করতে পারলে ফুল বাগানটি অনেক দৃষ্টিনন্দন হবে বলে তিনি মনে করেন।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, তার কার্যালয়ের সামনে এমন একটি ফুল বাগান রয়েছে যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সবাই এমন ফুল বাগান দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও রোমাঞ্চিত হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘স্বপ্নপুরির’ মতো একটা ফুল বাগান পাওয়ায় তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। এই ফুল বাগানটি আরও সম্প্রসারণ করে আরও মনোমুদ্ধকর করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন