ফেসবুকে গেলেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞাপন। এছাড়া টিভি স্ক্রল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনতো আছেই। বিজ্ঞাপনের বাহার অথবা আধিক্য দেখে অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হন শিক্ষার্থীরা, ভুল করেন সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেছে নিতে।
উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারির কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় ২০২০ সালে শতভাগ পাস করেছে এইচএসসি এবং সমমানের শিক্ষার্থীরা। মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ ১১টি বোর্ডে পাস করেছে ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাধারন ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৪৯টি। এর মধ্যে ৪৬টি তে ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়েছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭ টি । রয়েছে তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্ত তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় – জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়াও উচ্চ শিক্ষাস্তরে রয়েছে, বিশেষায়িত কলেজ, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি। এ সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও পাশ কোর্স মিলিয়ে আসন সংখ্যা আছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে আসন সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার।
এইচএসসি’র পাশের পর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে প্রত্যাশিত ক্যারিয়ারভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন। সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হয় মেডিকেল কলেজ এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে অনেকেই তার পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন না। অনেক ছাত্র মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেই হল সে যে বিষয়ই হোক। আশির দশকে অনেকে তার পছন্দের বিষয় না পেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ভর্তি হওয়া ছাড়া কোন গতি ছিল না। অন্যদিকে যাদের সামর্থ্য ছিল তারা বিদেশে পাড়ি জমাত উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য।
১৯৯১ সালে দেশে প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রাইভেট মেডিকেলের সংখ্যা অনেক। আছে চাহিদা মোতাবেক বিষয়। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে? কিভাবে মূল্যায়ন করবে কোনটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়? এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে কি সরকারি চাকরি মিলবে? বিদেশে কি এমফিল বা পিএইচডি করা যাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। সত্যিকার অর্থে যারা শিক্ষার সাথে জড়িত না তাদের পক্ষে উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুনগত মান নিরুপন এবং গ্রেডেশনের সরকার ইতিমধ্যে এক্রিডিয়েশন কাউন্সিল করেছেন কিন্তু এখনও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন বা উক্ত কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন রেটিং/গ্রেড বা ক্রম তালিকা করেননি যা দেখে শিক্ষার্থীরা বা অভিবাবকবৃন্দ তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিতে পারবে। বাংলাদেশে রেটিং না হলেও বিদেশের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রেটিং এ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। সে ক্ষেত্রে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়ে রেখেছেন। সেখানে লাল তারকা চিহ্ন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা উল্লেখ করেছে। ১০ বছরের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাস আছে কিনা সেটাও বিশ্ব বিদ্যালয় নির্বাচনে একটি মূল ভূমিকা পালন করবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরটরি, খেলাধুলার মাঠ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অধ্যাপক, মানসম্পন্ন শিক্ষক, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাবেরটরি, কো-কারিকুলার কার্যক্রম, ইন্টার্নশীপের ব্যবস্থা, নিয়মিত সমাবর্তন হয় কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য আইইবি’র অনুমোদন এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
এ ছাড়াও নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্রদের (এলুমনাই) জব মার্কেটে অবস্থান, স্বনামধন্য এলুমনাই ইত্যাদি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্রেডিট। অতএব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে উপরোক্ত দিকগুলো বিবেচনা করলে একজন শিক্ষার্থী উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েটি নির্বাচন করতে পারবেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার