প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরে পাড়ি জমিয়েও নানা সংকটে ভুগছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, বিশ্বমানের গ্রন্থাগার ও আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকা, আবাসিক হলে আসন সংকট, গণরুম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বহিরাগত যানচলাচলসহ নানা সমস্যায় এখনো পর্যদুস্ত দেশের উচ্চশিক্ষার প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটি।
তবে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় হিসাব ধরে এই পরিকল্পনার আওতায় ১৫ বছরে তিন ধাপে প্রয়োজনীয় ৯৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে।
সেই সাথে ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হবে অনেক স্থাপনা, যুক্ত করা হবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ‘মাস্টারপ্ল্যান’ আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হলে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়নের জন্য ‘ডাটা এক্সপ্রার্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা গত তিন বছর ধরে কাজ করে নকশা প্রণয়ন করেছে। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় পুরাতন বেশ কিছু ভবন ভেঙে ফেলে এবং ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে।
ক্যাম্পাসে বিশ্বমানের গ্রন্থাগার সুবিধা, গাড়ি পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংসহ জলাধার, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক জিমনেসিয়াম ও মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনায় তিন ধাপে মোট ৯৭টি ভবনের মধ্যে ১৭টি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর আবাসনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের জন্য আটটি, ছাত্রদের ১৬টি হল, হাউজ টিউটরদের জন্য ২২টি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১২টি ও কর্মচারীদের জন্য নয়টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও আরও ১৩টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে জানান, এই প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে নীলক্ষেত থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যে টানেল যাবে, সেটির খরচ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। টানেলের ডিজাইন না হলে সেটি বলা যাবে না। এছাড়াও শাহবাগ থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত মেট্রোরেলের পশ্চিম পার্শ্বের দুইটা লেন আছে। আমাদের প্রস্তাবনা আছে, এর পূর্বদিকে আরও দুইটি লেন নির্মাণের। পশ্চিম পার্শ্বের দু’টি লেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে। আর অন্য দুটি জনসাধারণের জন্য নির্ধারিত থাকবে। এর খরচও এখনো হিসাব করা হয়নি। এছাড়া দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। সেটির খরচ এখনো হিসাব করা হয়নি।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনাটি দেখেছেন। তিনি সার্বিকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাও দিয়েছেন। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় এটি থেকে উপকৃত হতে পারবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই