১৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:৫৮

চেনা রুপে ফিরল ঢাবি ক্যাম্পাস

নাসিমুল হুদা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

চেনা রুপে ফিরল ঢাবি ক্যাম্পাস

সংগৃহীত ছবি

ক্লাসরুমে গম্ভীর লেকচার দিচ্ছেন শিক্ষকেরা, টিএসসি-বটতলা-হাকিম চত্ত্বরে চলছে ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডা, সেলফিবাজি, হৈ-হুল্লোড়, আর অদূরের মধুর ক্যান্টিন থেকে ভেসে আসছে গগণবিদারী স্লোগান। গতকাল দেড় বছর পর যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফিরে পেলো প্রাণ, পুরোনো রুপে ফিরলো একান্ত আপনজনদের সঙ্গী করে। 

ঠিকই তো, করোনা দশা কাটিয়ে প্রায় ১৮ মাসের অপেক্ষা শেষে রবিবার সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই আনন্দ বয়ে গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবার মাঝে। দীর্ঘদিন পর চেনামূখগুলোর দেখা পেয়ে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন তারা।

সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর দিন মূখর ছিলো রাজনীতির আতুরঘর মধুর ক্যান্টিনও। সকাল থেকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যান্টিনের ভিতরে-বাহিরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এজন্য শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভাগ ও ইন্সটিটিউটগুলোকে তদারকি করতেও সেসময় পরামর্শ দেওয়া হয়। 

রবিবার কলাভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। সিনিয়র-জুনিয়র আর বন্ধুদের সাথে দেখা হতেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই করমর্দন-কোলাকুলি করছেন তারা। মুর্হুতকে স্মৃতি ধরে রাখতে সেলফি তুলছেন নানা ভঙ্গিতে। তবে ক্লাস-পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হয়েছে।

ক্যাম্পাসে ফেরার অনুভূতি জানিয়ে ইংরেজি বিভাগের জারিন তাসনিম রাইসা বলেন, এত দিন পর ক্লাসে ফিরে বন্ধুদের সামনাসামনি দেখতে পেয়ে আসলেই খুব ভালো লাগছে। স্যাররাও খুব ‘কো-অপারেটিভ’ ছিলেন। ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে কোন কোন বন্ধু-বান্ধবী এলো, তাই খুঁজছিলাম। আর ক্লাস শেষে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় চা, সমুচা, সিঙারার সাথে আড্ডা, সব মিলে খুব ভালো লেগেছে। 

এদিকে, সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষকেরা চাইলে অনলাইনে ক্লাস নিতে পারবেন। তবে তা নির্ধারিত কোর্সের মোট ক্লাসের ৪০ ভাগের বেশি হবে না। সেশনজট কাটিয়ে উঠতে এখন থেকে ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’ অনুসরণ করা হবে। এর আওতায় ছয় মাসের সিমেস্টার চার মাসে, আর বার্ষিক কোর্স এক বছরের পরিবর্তে আট মাসে নামিয়ে আনা হবে। সিলেবাস সম্পন্ন করতে শনিবারও ক্লাস নেওয়া যাবে। এছাড়াও, শ্রেণিকক্ষে বা ল্যাবরেটরিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের একাধিক সেকশনে বিভক্ত করে পাঠদানের নির্দেশনাও দিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল। 

সকাল ১১টার দিকে কয়েকটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ও কলাভবন পরীক্ষাকেন্দ্র পরির্দশন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি পরিপূর্ণ হলো। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। শিক্ষার্থীদের নষ্ট হওয়া সময় পূনরুদ্ধারে ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’ করা হয়েছে। এর আওতায় বড় ছুটি কমিয়ে আনা, কম সময়ে অধিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, ক্লাস-পরীক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময়সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনা রাখা হয়েছে। আশা করি, এক বছরের মধ্যে সেশনজট কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর