স্বাধীনতার পূর্বদিন পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ শামসুজ্জোহা হল ব্যবহৃত হয়েছিল হানাদার বাহিনীর রাজশাহী জেলার প্রধান ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে অপারেশন হেডকোয়ার্টার রূপে। বন্দিশালা, নির্যাতনকক্ষ সবই ছিল এখানে। বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের পাশে হওয়ায় প্রতিদিন এখানে ট্রেনে করে দূরদূরান্ত থেকে ধরে আনা হতো মুক্তিবাহিনী আর নিরীহ বাঙালি সন্তানদের। শান্তিকমিটি আর আলবদর প্রতিনিধিসহ বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে প্রহসন হতো, যেখানে মৃত্যুদণ্ডই ছিল একমাত্র শাস্তি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাতে বন্দিদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো বধ্যভূমিতে। তারপর গর্তের মধ্যে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মেশিনগান চালানো হতো গর্তের দিকে তাক করে। তার পর চাপা দেওয়া হতো মাটি। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাস থেকে বদলে গেল হত্যাপদ্ধতি। যখন ওরা জানতে পারল গুলি খেয়েও অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
আর রোজ রোজ গুলির শব্দের দরুন হত্যাযজ্ঞের কথাও বাইরে রটতে লাগল। তাই শুরু হলো জবাই পদ্ধতিতে গণহত্যা। কখনো ধারালো তরবারি আবার কখনো রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে বাঙালি নিধন চলল।
বলিদণ্ড তৈরি করা হয়েছিল, যার ওপর বন্দিদের মাথা রেখে জবাই করা হতো।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পরিবেশ থিয়েটার 'জোহা হল কথা কয়'।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজনে আজ সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলে মঞ্চায়িত হবে নাটকটি। ৭১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই পরিবেশ নাটকটির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ১৯৭১ সালে তৎকালীন জোহা হলে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় নাটকটি রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান রাজু।
অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু জানান, নাটকটিতে পুরো জোহা হলকে ভেন্যু হিসেবে কাজে লাগিয়ে পরিবেশে সৃজন করা হবে। এতে অভিনয় করবে দুইশত একুশ জন কলাকুশলী। নাটকটি সম্পন্ন বা মঞ্চস্থ করতে জোহা হলের মাঠ, বিভিন্ন রুম, বারান্দাকে ব্যবহার করা হবে। ৭১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই নাটকটিতে একাত্তরে জোহা হলে পাক হানাদার বাহিনী যে তান্ডব লীলা চালিয়েছে তাই ফুটিয়ে তোলা হবে।
অধ্যাপক আতাউর রহমান আরও জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সারাদেশের ৬৪টি জেলাতে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে এমন জায়গাতে সে আবহ তৈরি করে নাটক মঞ্চস্থ করছে। যেহেতু রাজশাহীতে জোহা হলকে কেন্দ্র করে একাত্তরের অনেক ঘটনা ঘটেছে তাই আমরা জোহা হলকে বেছে নিয়েছি। আমাদের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন আমাদের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে।
অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘নাটকটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। হলের দুই ব্লকের মাঝের ফাঁকা জায়গায় বসে দর্শকরা নাটকটি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া হলের বাইরে দর্শকদের জন্য নাটকটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। চিত্রধারণের জন্য ৬টি ক্যামেরা সংযুক্ত থাকবে। দর্শকদের সুবিধার্থে নাটকটি ফেসবুক লাইভেও সম্প্রচার করা হবে।’
রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন নাট্য সংগঠন, রাজশাহী মহানগরীর নাট্য-নৃত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এতে অংশগ্রহণ করবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হবে ‘জোহা হল কথা কয়’ নাটকটি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন