তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের প্রথমবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান। তিনি হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে হুমকির মুখে প্রাণভয়ে হল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী রোকনুজ্জামান রোকন তাকে নির্যাতন করেন বলে জানিয়েছেন তৈমুর। রোকন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র।
প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া অভিযোগে তৈমুর বলেন, ‘হলের মাঠে সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে কেন কথা বলেছিস’- এটি জিজ্ঞাসা করে রোকন আমাকে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় দেন। এতে কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাইনি এবং তীব্র মাথাব্যথায় ভুগতে থাকি।’
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘এরপর রোকনুজ্জামান আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানালে তিনি আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে আমি ভয় পেয়ে ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হল ছেড়ে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।’ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রোকনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
ভুক্তভোগী ও তার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ তাদের অধীনে গণরুমে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নিয়মিত কৈফিয়ত প্রদান কর্মসূচি- গেস্টরুম’ পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে মূলত ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়। সাধারণত দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের গেস্টরুম পরিচালনা করেন। গেস্টরুমের অন্যতম নিয়ম হলো, দ্বিতীয়বর্ষ ছাড়া অন্য সিনিয়রদের সঙ্গে সালাম দেওয়া ব্যথিত আর কোনো কথা বলা যাবে না। এই নিয়ম ভঙ্গের জন্য নির্যাতন করা হয় তৈমুরকে।
তবে তৈমুর জানান, আমি স্বেচ্ছারক্তদাতা সংগঠন বাঁধনে কাজ করি। রক্তের ব্যাপারে ওই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। গেস্টরুমে তার বন্ধুদেরও নিয়মিতই মারধর করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে, নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না- বলে জানান অভিযুক্ত রোকন। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম শাহরিয়ার ওরফে মুনের অনুসারী। মুনায়েম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
গেস্টরুমে নির্যাতনের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আরেকজন শিক্ষার্থীর অসদাচরণের বিষয়। এর সঙ্গে দলীয় সাংগঠনিক রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা হল প্রশাসনকে ইতোমধ্যে হলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’
গেস্টরুম পরিচালনার করার কারণে নির্যাতনের দায় ছাত্রলীগের ওপর বর্তায় কি না, এর জবাবে তিনি বলেন, হলের মধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম মিছিল-মিটিং, দলীয় আদর্শের কথা বলা, মতবিনিময়, এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যকিছুকে ছাত্রলীগের কর্মসূচি বলার সুযোগ নেই।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, কমিটি আজই প্রতিবেদন দেবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ