ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে ঘিরে আবারও হাইকোর্ট মোড় এলাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে হাইকোর্ট মোড় থেকে ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সংঘর্ষের সূচনা হয়। এসময় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জাতীয় কিছু বের করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে গুলির শব্দও শোনা যায়। সংঘর্ষে ছাত্রদলের অন্তত ২১ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত সাতজনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে, ঘটনার সময় ফেসবুক লাইভ দেওয়ার সময়ই এক সাংবাদিকের হামলা ও তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মে ক্যাম্পাসে নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় ছাত্রদল। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে আসতে পারে, এমন খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশমুখে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। মোটরসাইকেলের ‘শোডাউন’ও দেয় তারা।
পরে দুপুর বারোটার দিকে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে মিছিল বের করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় পেরিয়ে দোয়েল চত্ত্বরের দিকে এগোলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাঁধার মুখে পড়ে। এসময় দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রদলকে পাল্টা ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রেসক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট ও গুলিস্তানের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান। ধাওয়া দেওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ লাঠিসোঁটা নিয়ে হাইকোর্টের ভেতর ঢুকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন। এসময় একটি ভবনের সামনে এক ছাত্রদলকর্মীকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী মিলে মারধর করতে দেখা যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি রিকশায় করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কয়েকজন। আহত ব্যক্তি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী রাজু হাসান রাজন।
এদিকে, সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের সদৃশ্য কিছু একটা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দিকে তাক করতে দেখা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুলির শব্দও শোনা যায়। এদিকে, ঘটনাস্থলে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য থাকলেও সংঘর্ষ থামাতে তাদের তৎপরতা দেখা যায়নি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাইকোর্ট মোড়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় প্রবেশ করা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যায়। এদিকে, সংঘর্ষের সময় হাইকোর্ট এলাকা থেকে ফেসবুক লাইভ দেওয়ার একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদকের উপর হামলা ও তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় ওই সাংবাদিকের ঘাড় ও হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘আমরা কোথাও দাঁড়াতে পারছিলাম না। পরে হাইকোর্ট মোড় থেকে মিছিল বের করে দুই-তিন মিনিট এগোলে ছাত্রলীগ লাঠিসোটা, রড়, চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এখন পর্যন্ত ২১ জন আহত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এর মধ্যে দু’জন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক তানভীর আজাদী, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী রাজু হাসান রাজন ও আব্দুল কাইয়ুমসহ সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ছাত্রদল আবারও ক্যাম্পাসে যাবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্র, আমরাও সেই প্রক্রিয়ায় ছাত্র। আমাদেরও অধিকার আছে, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমর্থনেই উগ্র ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ছাত্রলীগ হামলার সাহস পাচ্ছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসনকে অভিভাবকসূলভ আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ছাত্রদল তার পুরনো ইতিহাসের মতো ফের ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে শান্তিপূর্ণ রাখতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছে। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ একাত্মতা ঘোষণা করেছি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক