১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোকদিবস পালনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, 'কৃষ্ণপক্ষের দীর্ঘতম রাত্রি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। জনক আগেও জ্যোতির্ময় ছিল এখন আরো জ্যোতির্ময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির হৃদয় নিংড়ানো আবেগী নাম। এই নামের সাথে মিশে আছে বাঙালির আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবুর রহমান এই দু’টি শব্দ একটি আরেকটির পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু সতত-সমুজ্বল, সর্বত্র বিরাজমান।'
আজ শোক দিবসের শুরুতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনভবনসহ অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯:৩০ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার শোক র্যালিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সে সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অব.) মো. অবাইদুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, হল প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতিগণসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।
পরে বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভাগ, রাবি শিক্ষক সমিতি, ক্যাম্পাসের স্কুলসমূহ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, রাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০ টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে সভায় ‘বঙ্গবন্ধু ও আধুনিক রাজনীতি’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট লেখক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায়। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন।
আলোচনাকালে স্বদেশ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মানের কারিগর। কেন না, এই উপমহাদেশে ইংরেজদের দ্বারা যখন মানুষ পদদলিত হচ্ছিল, তখন রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য গড়ে উঠে রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস। তবে সেটাও যখন ধর্মের দ্বারা বৈষম্যে আবদ্ধ হয়ে পড়তে শুরু করল, তখন গড়ে উঠল মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে সেই ধর্মকে কেন্দ্র করেই ভারত বিভক্ত হয়ে গড়ে উঠল ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র। সেখানেও ধর্মীয় বৈষম্য যখন চরমে, তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঘটল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
তিনি বলেন, যে দেশে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠির সমান অধিকার থাকে না, সেটা আধুনিক রাষ্ট্র হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন এ দেশে কোন ধরনের ধর্ম-বর্ণের বৈষম্য রাখেন নি। বরং বাঙালি জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এমনি এক অসাম্প্রদায়িক ও আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বঙ্গবন্ধু।
আলোচনা সভার সভাপতি উপ-উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ও পারিপার্শ্বিক ঘটনার নৃশংসতায় জাতি হতবিহ্বল ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। বীরের জাতি বাঙালি শ্রীঘ্রই শোককে শক্তিতে পরিণত করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার তারা ঘুরে দাঁড়ায়। দীর্ঘ ২১ বছরের ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল আর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে মাড়িয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালি জাতির অপরিশোধ্য ঋণের কিছুটা হলেও স্খলন হয়।
উপ-উপাচার্য আরো বলেন, মুজিব একটি জাগ্রত ইতিহাস, স্বাধীন জাতিসত্ত্বার অপরিমেয় অহংকার। তিনি বাঙালি জাতির আস্থার দীপ্ত প্রতীক। তাইতো তিনি উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন তিনি মানুষ, তিনি বাঙালি।
আলোচনায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিকও বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সহ বিভিন্ন অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগীয় সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে রচনা প্রতিযোগিতা, বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল, সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা এবং সন্ধায় শহীদ মিনার চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন। সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কবিতা পাঠ ও আলোচনা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন