ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর উপর ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের হামলা-মামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে চার দফা দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠন।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) উপাচার্যের কার্যালয়ে এরকম কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনটির পক্ষে স্মারকলিপি প্রদান করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রুশাদ ফরিদী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত ছয় মাসে তিনটি বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা গেছে, বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিসোটা, লোহার পাইপ, রড জাতীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে এবং নির্মম ভাবে পিটিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মীরা।
হামলার ঘটনায় বর্ণনা দিয়ে বলা হয়- এ বছরের মে মাসে ছাত্রদলের এক সমাবেশে ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের দুই দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। গত ২৭শে সেপ্টেম্বর উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসার পথে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটির নেতাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর একটি ঘটনাতেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে আরও বলা হয়- গত ৭ অক্টোবর বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় নির্মম হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। আহত ছাত্ররা ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে সেখানেও পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আর ছাত্রলীগ সংগঠনটির ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এই ভয়াবহ নিপীড়নমূলক ঘটনার বিচার বা দোষীদের শাস্তি দেবার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।
এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ভূমিকাকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, তিনি নির্যাতিত শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানিতে ছাত্রলীগের সহযোগী হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নামেমাত্র উপাচার্য-প্রভোস্ট-প্রক্টর আছেন, মূল দায়িত্বে ছাত্রলীগই আছে’ বলেও মন্তব্য করেন তারা। শিক্ষকবৃন্দ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়নের ঘটনা ‘সাধারণ শিক্ষক’দের জন্য ‘লজ্জার’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জন্য ‘অত্যন্ত মানহানিকর’।
স্মারকলিপিতে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- উপরিল্লিখিত ঘটনাগুলোর পূর্ণ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ছাত্রদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা; ভবিষ্যতে এই ধরনের সহিংস ঘটনা যাতে আর সংঘটিত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রক্টোরিয়াল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ শিক্ষক গোলাম রাব্বানীকে অবিলম্বে অপসারণ করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একজন নিরপেক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান; এবং হলগুলোকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দখল মুক্ত করে শিক্ষকদের দায়িত্বে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রভৃতি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ