রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিনোদপুর বাজারে স্থানীদের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মারধর ও জখমের অভিযোগ এনে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর, হামলা, গুরুতর জখম করার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম। এ মামলার প্রেক্ষিতে তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরাগতার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সংবাদ প্রকাশের জেরে চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক ও সহকারীর উপর হামলা চালান ও ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। সেখানে শহর ও ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের উপরও চড়াও হন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একপেশে নিউজ করে তিনি বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন। দুপুরে এই আন্দোলন আরো তীব্র হয়। বিক্ষোভে উত্তাল হয় পুরো ক্যাম্পাস। উপাচার্য উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়।
এসময় বিনোদপুর বাজারে গিয়ে এই ঘটনার সুরাহা করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা৷ অনেকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও স্থানীয়দের হামলার বিচার দাবি করেন। আবার কেউ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেন এবং প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। এভাবে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আন্দোলন করেন তারা। দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সকল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে বাসভবনে পাঠানো হয়। কিন্তু একদল শিক্ষার্থী আবার আন্দোলন শুরু করেন। তারা উপাচার্যের বাসভবনে কেউ অবস্থান নেন এবং কেউ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেন।
এই শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ ও স্থানীয়দের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুল পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য পুলিশ সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাহিরের পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
বিকেলে জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্ভুত ঘটনাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশামন মর্মাহত। প্রশাসন সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা চায়। তাই উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকল শিক্ষার্থীর সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এছাড়া জানানো হয়, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে প্রশাসন। এমনকি গতরাতে শিক্ষার্থীদের ওপর এলাকাবাসী ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ দাবি জানায়। এঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা করার কথাও জানানো হয়েছে।
এরআগে, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মধ্যরাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাজশাহী মেডিকেলে হাসপাতালে ভর্তি হন শতাধিক শিক্ষার্থী। রাতে সংঘর্ষ চলাকালে বিনোদপুর বাজারে বেশ কিছু দোকান ও বিশ্ববিদ্যালয় গেটে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাজার ও ক্যাম্পাসের বাহিরে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এ ঘটনায় বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, শিক্ষার্থীরা ৩০টির বেশি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে তাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল