চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী রোকেয়া সুলতানা রুকু (২২) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পেছনে স্বামী কাউছার জড়িত বলে দাবি করেছে পরিবার। গত শনিবার চবি শামসুন্নাহার হলের ২১০ নম্বর কক্ষে ৫টার দিকে আত্মহত্যা করেন তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে রুকুর পরিবার।
জানা গেছে, ২০২২ সালের মে মাসে পরিবারের অগোচরেই দু'জনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দু'জনের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়। রোকেয়া সন্তানসম্ভবা হওয়ায় অসুস্থ ছিলেন কিছুদিন। এসময় চতুর্থ সেমিস্টারের ৩টি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেজন্য ইয়ার ড্রপের হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন দাবি স্বামী কাউছারের।
আত্মহত্যার আগের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় রোকেয়াকে স্বামী কাউছার চবি বঙ্গবন্ধু উদ্যানে চড় থাপ্পড় দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ইফতারের পরে বেড়াতে বের হই। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সমানে দিয়ে যাওয়ার সময় রোকেয়া ও তার স্বামীকে বসে থাকতে দেখি। এসময় দেখি তার স্বামী তাকে শাসাচ্ছেন। তিনি (কাউছার) বলছিলেন, 'তুই ঔষধ খাস না কেন? তুই কি আমারে মারবি?'
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আনোয়ার বলেন, এসময় তিনি রোকেয়াকে থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে বলছিলেন, বল, তুই কিভাবে মরবি? গলায় দড়ি দিবি, নাকি অন্যকিছু করবি? কিন্তু, স্বামীর এসব বকাঝকার সময় রোকেয়ার কোনো কথা ছিলনা। সে নিশ্চুপ ছিল। তাকে দেখে হতাশ মনে হয়েছে। পরে আমাদেরকে দেখে তার স্বামী তাকে বলেছিল, চল, ওদিকে চল। এখান থেকে উঠে আয়। ওদিকে চল।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, বিষয়টিকে আমরা তেমন সিরিয়াসলি নিলাম না। রোকেয়ার মৃত্যুর পর নিউজে তার স্বামী কাউসারের ছবি দেখে চিনতে পারি। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যারা কথা বলেছিল তারা হলেন রোকেয়া ও তার স্বামী।
প্রয়াত রোকেয়ার বড় ভাই আল আমিন বলেন, একমাত্র সেই ছেলের (কাউছার) মানসিক এবং শারীরিক টর্চারের কারণে আমার বোন আত্মহত্যা করছে। আমার বোন পড়াশোনার কারণে আত্মহত্যা করেনি। সে ২০১৯ সালে ইন্টারেও ইয়ার লস করেছিল। সে ইয়ার লসের কারণে আত্মহত্যা করেনি।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আল আমিন। তিনি বলেন, আমার বোনটাকে সে মেন্টালি টর্চার করে মেরে ফেললো। আর অভিযোগ করলো পরীক্ষার ইস্যু। সে (কাউছার) ডিপার্টমেন্টের উপর দোষ চাপাইলো। আমার বোন খুবই মেধাবী ছিল। আগের সেমিস্টারে তার জিপিএ ৩.৯০ ছিল। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রয়োজনীয় সবগুলো আইনি পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
এবিষয়ে প্রয়াত রোকেয়ার স্বামী কাউছার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শনিবার আমি হল গেইটে অপেক্ষায় ছিলাম। তাকে মোবাইলে পাচ্ছিলাম না। পরে তার এক বান্ধবী খবর দেয় সে আত্মহত্যা করেছে। রোকেয়া আমাকে কিছুই বুঝতে দেয়নি। সে অসুস্থ থাকায় আমি তাকে সঙ্গ দিতে ক্যাম্পাসে চলে যাই। সে সন্তানসম্ভবা আমাকে জানায় গত মাসে। সে পড়াশোনা ক্ষতি হবে ভেবে সন্তান নিতে চাইছিলো না। সে এমন কাজ করবে এটা আমার কল্পনাতীত ছিল।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুর রহমান বলেন, আমরা রোকেয়ার মৃত্যুতে খুব দুঃখ পেয়েছি। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা তাকে আশ্বস্ত করি সে যেন চিন্তা না করে। তাকে চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করতে বলি। রোকেয়া প্রেগন্যান্ট ছিল। এবিষয়টি সে বিভাগের নিকট জানিয়েছেন। আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. নুরুল আজিম সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালে রোকেয়ার পরিবার থেকে বিচার চায়নি। যদি আইনি জটিলতা নিয়ে বিচার না চেয়ে থাকে তাহলে যেকোনো সময় অভিযোগ দিতে পারে। আমরা সহায়তা করবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল