বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৭ বছর পরে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বল্প পরিসরে উদ্বোধন করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলিং সেন্টার। দীর্ঘ দেড়বছর পার হলেও কাউনসিলিং সেন্টার থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
সরোজমিনে দেখা যায়, কাউন্সিলিং সেন্টারের দুটি ছোট কক্ষে বসে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মানে) অধ্যায়নরত দুজন শিক্ষার্থী। তারা একে অপরের সঙ্গে বসে গল্প করছেন একই কক্ষে। কোন শিক্ষার্থী সেবা নিতে আসছেন না বলে অলস সময় পার করছেন তারা।
তারা জানান, কাউনসিলিং সেন্টারে তাদের মত প্রতিদিন একই বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থী এখানে বসেন সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো শিক্ষক কিংবা বিশেষজ্ঞ কেউ আসেন না এখানে। তাদের দিয়েই নামে মাত্র পরিচালনা করা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভুগছিলাম। এক সহপাঠীর পরামর্শে কাউন্সেলিং সেন্টারে এসেছিলাম সেবার জন্য। কিন্তু এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ নেই যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিবে। আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে যা আমার কাছের মানুষরা দেয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, সারাদেশে যেভাবে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছে আমাদের এখুনই পদক্ষেপ নিতে হবে। কখন কি হয় বলা যায় না। এই কাউন্সিলিং সেন্টারের বছরে একটি আনন্দ রেলি এবং শোভাযাত্রা ছাড়া আমি কিছুই দেখিনি। শিক্ষার্থীদের দিয়ে তো আর এমন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটা চলতে পারে না। তাদের উচিত প্রতিটি বিভাগে এসে অভিহিত করা এবং শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কাউনসিলিং সেন্টারের পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কাউন্সিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন শিক্ষার্থীকে সেবা দিয়েছি। আমাদের এইখানে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত কাজ করছে। আমরা সপ্তাহে চারদিন (মঙ্গলবার) বাদে আপাতত সকাল ৯ টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকি।
তিনি আরও জানান, এখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত, চাকরি পরীক্ষার ভাইবা বোর্ডে ফেল করে, পারিবারিক , অর্থনৈতিক, একাকিত্ব এবং প্রেম সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসেন। আসলে আমাদের লোকবল এবং বিশেষজ্ঞ কোনো কাউন্সিলর নেই, তবে আমরা চেষ্টা করি তাদের যথাসাধ্য সঠিক পরামর্শ দেয়ার জন্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের একাকিত্ব সঙ্গ দূর করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল