বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বুধবার(২৭ নভেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একে একে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ-ছাত্র জনতা। পরে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি রোকেয়া হল-স্মৃতি চিরন্তন-গুরুদুয়ারা হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা আযানের সময় পূজার ঘণ্টা বন্ধ রাখে। আবার পূজার সময় যেন হামলা না হয় সেজন্য মুসলমান ভাইয়েরা পাহারা বসায়। এই বাংলাদেশে কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে ধাবিত করা যাবে না। সাইফুল ভাইকে হত্যা ও হাসনাত-সারজিসের ওপর হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের কোনোভাবেই উস্কানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না।’
চার দফা দাবি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য মানুষ আহত-নিহত হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, বাংলাদেশ যতদিন আছে কেয়ামত পর্যন্ত সেই বিজয়কে ধারে রাখতে হবে। সেই ধরে রাখার জায়গা থেকে চার দফা দাবিতে বাংলাদেশের সব মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছি।’
দাবিগুলো হলো— বাংলাদেশের হিন্দুদের ওই হিন্দুত্ববাদী প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে; দেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পেছনে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ বিচার শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্বের পাহারাদার যারা তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করার পরিকল্পনা চলছে।
তিনি বলেন, এই বাংলার মাটিতে দিল্লির ক্রীতদাস হাসিনাকে ভারত টিকিয়ে রাখতে পারেনি। এদেশের কেউই আর দিল্লির দালালি করবে না। ভারতের শেষ ভরসা ছিল চিন্ময় কৃষ্ণ। এখন তারা একে একে টার্গেট করছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের। আমরা যেকোনো সময় আমাদের জীবন দেশের স্বার্থে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি। আমাদের মেরে ফেললে দেশের সার্বভৌমত্ব থেমে যাবে না।
উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের বহরের একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. সামি গণমাধ্যমকে বলেন, গাড়িতে আসিফ, মাহাতির, সবুজ ও নেওয়াজ ছিল। প্রাইভেটকারটি মহাসড়কে উঠার সময় চট্টগ্রামগামী একটি ট্রাক সাইডে গিয়ে চাপা দেয়। এতে গাড়ির সামনের অংশে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পেছনের গাড়ি সামনে গিয়ে ট্রাকটির চালক ও হেলপারকে আটক করে লোহাগাড়া থানায় দেওয়া হয়েছে। তারা এখন লোহাগাড়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম