চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেছেন, অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। তবে, আগে মেরুদণ্ড সংস্কারের কমিশন হওয়া দরকার ছিল। এতোদিন যে এই কমিশন হয়নি, সেজন্য আমি অবাক হচ্ছি। কথা বলার সময় বলবেন- শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড, আর চিকিৎসা করার সময় বলবেন যে, আঙুলের চুলকানির চিকিৎসা আগে করি, মেরুদণ্ডের ব্যথা পরে দেখবো। তাহলে তো হবে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এখনও সময় আছে আপনারা শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন করুন।
সোমবার সকাল ১১টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে ‘বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনায় উপাচার্য এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
উপাচার্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশকে একটি অভূতপূর্ব সংস্কারের সুযোগ উপহার দিয়েছে। ৭১ সালেও দিয়েছিল, তবে আমরা তা ভূলুণ্ঠিত করেছি। সে সুযোগ আবার এসেছে। এটি হাতছাড়া হলে আবার আয়না ঘরের সৃষ্টি হতে পারে। এটি হাতছাড়া করা যাবে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি সরকারের প্রতি আরেকটা দাবি করতেন, ‘একটা শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে। আমি খুশি হতাম। অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। তবে, আগে মেরুদণ্ড সংস্কারের কমিশন হওয়া দরকার।
উপাচার্য বলেন, যদি এটি গঠন করেন, তাহলে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। কারণ, আপনাদের সকল অফিসার, ক্যাডার আমাদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে প্রডিউস করছি। এখান থেকে তারা বিশৃঙ্খলা দেখে গেলে আপনাদের অন্য সংস্কারগুলো কার্যকর হবে না। এখান থেকে তাদের সঠিকভাবে তৈরি করতে শিক্ষা সংস্কার কমিশন জরুরি। এটাই হলো মেরুদণ্ড। শিক্ষার যদি সংস্কার না হয়, তাহলে সব সংস্কার বৃথা যাবে। তাই সংস্কার করতে চাইলে সবার আগে শিক্ষার সংস্কার করা হোক। আমরা ইনশাআল্লাহ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো। কেউ আর বৈষম্যের শিকার হবে না।
তিনি বিগত সরকারের ব্যর্থতা ব্যাখ্যা করে বলেন, ৭১ সালের আগে পাকিস্তান সরকার যেভাবে জুলুম করেছিল, ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারও একই কাজ করেছে। দুই ক্ষেত্রেই অরাজক ও দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়, ফলে তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে। ৭১ সালে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করেছিলাম। এই ঐক্য আমরা ধরে রাখতে পারিনি। মুজিব সরকার এবং হাসিনার সরকার দুজনেই দুর্নীতির কারণে পরাজিত হয়েছে। তারা আমাদের ঐক্যকে কুক্ষিগত করেছিল।
উপাচার্য বলেন, মুজিব সরকারের অনেক দুর্নীতি আমি জানি। একটা বলছি, কারণ দেশ ছিল যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত। গবেষকরা লিখেছেন, যুদ্ধের সময় অনেক রিলিফ এসেছিল। আমেরিকা থেকে যে সাহায্য এসেছিল সেখান থেকে মাত্র ১০ শতাংশ পৌঁছেছিল যাদের জন্য এটা এসেছিল। বাকিটা তখনকার জনপ্রতিনিধিরা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছিল, তছরুপ হয়েছিল। প্রশাসনের অন্দরমহল বইয়ে লেখা আছে, যুদ্ধের সময় আমাদের স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ব্যবহার করেছিল, তাই সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানিরা। যুদ্ধের পরে ইউনিসেফ এই স্কুলের জন্য সাহায্যে চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী যখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়, জাহাজ সম্পূর্ণ ফাঁকা পাওয়া যায়, অথচ সেই চুক্তির দায়িত্বে ছিল বঙ্গবন্ধুর আপন ছোট ভাই শেখ নাসের। এ কথা শুনে সে সময়কার মন্ত্রী কেঁদেছিলেন। শেখ হাসিনার আমলেও একই রকম দুর্নীতি হয়েছিল। সেটা সবাই জানে। এগুলো আমি মনে করিয়ে দিলাম।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আমাদের দাবি, সেগুলো শুনে আমি খুশি হয়েছি। তাদের দাবিগুলোর পাশাপাশি আরেকটা দাবিও আমি যোগ করতে বলি, আমরা ক্যাম্পাসে জলকামান দেখতে চাই না, এটা ক্যান্টনমেন্ট না। আমাদের সব কার্যক্রম সময়মতো হোক এটা আমরা দেখতে চাই।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল