মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের দিক তুলে ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মঞ্চস্থ হয়েছে নাটক ‘ক্ষয়’। রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি বটতলা মুক্তমঞ্চে তীর্থক নাটকের তিন দশক পূর্তি উৎসবে এ নাটক মঞ্চস্থ করে সমকাল নাট্যচক্র।
নাট্যকার ও নাট্য গবেষক টিটো রেদোয়ান রচিত এই নাটকের প্রারম্ভে দেখা যায়, মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে শয়তান ইব্রুকে কুশিক্ষা, শয়তান চেরাসকে নেশা ও শয়তান গিলগিকে যুদ্ধবিগ্রহ সৃষ্টি করতে পৃথিবীতে পাঠান শয়তান রাজ। কিন্তু শয়তানের শিষ্যরা এসে দেখে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় শয়তানকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই তারা ফিরে গিয়ে শয়তান রাজকে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় সম্পর্কে বর্ণনা দেয়। শয়তান চেরাস বর্ণনায় দেখা যায়, মানুষকে আমরা বিড়ি কিংবা গাঁজা দিয়ে পথভ্রষ্ট করতে চাচ্ছি, অথচ তারা হেরোইনে আসক্ত। যা খেয়ে আমি নিজেই মাতাল হয়েছি।
গিলগি জানায়, মানুষে মানুষে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, প্রতারণা ও চাতুরী, সেখানে শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল। তখন ইব্রু বলে ওঠে, মানুষের কাছেই বরং শয়তানের শিক্ষা নেওয়া দরকার। কারণ, তাদের থেকে শয়তান ১০০ বছর পিছিয়ে। তখন শয়তান রাজ হুংকার দেয় এবং মানুষের অবক্ষয় স্বচক্ষে দেখতে পৃথিবীতে আসে। পৃথিবীতে এসে শয়তান রাজ দেখেন, যুদ্ধবিগ্রহে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে পুরো বিশ্ব। চারদিকে হাহাকার, পুড়ছে মানবতা। শয়তান রাজ দেখেন, পুলিশ জনগণকে জিম্মি করে অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করছে, অভিযুক্ত স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করছে। শয়তান রাজ আরও দেখেন, যৌতুকের জন্য স্বামীর নিগ্রহের শিকার এক নারীর জীবন। যাকে শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে স্বামী। এমনকি ভিক্ষুকের টাকা আত্মসাৎ করার চিত্র শয়তান রাজকে বিস্মিত করে। যেখানে ভিক্ষুক দিনের সব উপার্জন গ্রামের এক মণ্ডলের কাছে জমা রাখেন, কিন্তু চাতুরী করে সেই টাকা আত্মসাৎ করে মণ্ডল।
এসব দৃশ্য দেখে শয়তানের শিষ্যরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে শয়তান রাজ দিব্য দর্শন করে শিষ্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, মানুষ চরম নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করবে এবং নিজেরাই ধ্বংস হবে। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। ফলে শয়তান টিকে থাকবে।
দুইদিনব্যাপী এ উৎসবে তীর্থক নাটকের চৌর্যানন্দ ও আগুন পাখি নাটক এবং অরণী শিল্পীগোষ্ঠীর সাম্য ও ন্যায়ের গান পরিবেশনা করে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল