বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য। ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু বিগত দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিলেও বিগত নির্বাচনে মাত্র ছয় হাজার ভোটের পরাজয় ব্যথিত করেছে কামরানকে। সেই সাথে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন সময়ে সিলেটের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। নির্বাচনের পর থেকেই পরাজয়ের পেছনে তারা একে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।
এ অবস্থায় সিলেটে আলোচনায় উঠেছিল দলীয় সমন্বয়হীনতায় সিটি নির্বাচনে পরাজিত কামরান পেতে পারেন আরো বড় কিছু। ধারণা করা হচ্ছিল হয়ত উপহার হিসেবে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংসদীয় আসন সিলেট-১ থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে তাকে।
এমনটার দাবী জানাচ্ছিলেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও। সিটি নির্বাচনের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে লেখালেখি করছেন তারা। এমন গুঞ্জন ছিল নগরজুড়ে।
কিন্তু সেই গুঞ্জন নিজেই উড়িয়ে দিয়েছেন কামরান। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারী মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক সভায় সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কামরান বলেছেন, ‘আমার জন্য সিলেটবাসী অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে বার বার ভোট দিয়েছেন। আজ আমি আপনাদের সামনে বলছি আমার আর মনোনয়নের দরকার নেই। আমি আর কোন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইব না’।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আজকে এই মঞ্চে সিটি মেয়র হিসেবে আমার বসার কথা ছিল। কিন্তু, এ বিজয় আমি আপনাদের উপহার দিতে পারিনি। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আর কাঁদতে পারিনা, আমি কাঁদলে কর্মীরা কাঁদে, এই সিলেটের মানুষ কাঁদে’।
এদিকে কামরানের পরাজয় নিয়ে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও। সারাদেশে সিটি নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলেও পরাজয় ঘটেছে সিলেটে। আর পরাজয়ের পেছনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট এবং নেতাকর্মীদের প্রচুর অভিযোগ পড়েছে কেন্দ্রে। এসব বিষয় ক্ষতিয়ে দেখতে সিটি নির্বাচনের এক মাসের মাথায় গত বৃহস্পতিবার সিলেটে গেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, সিলেট-৩আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. লুৎফুর রহমান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।
বিডি-প্রতিদিন/০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব