সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সকল নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। তবে এখনো সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে সুরমা-কুশিয়ারার উৎসমুখ জকিগঞ্জের আমলসীদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানি কমলেও কমছে না বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গেল ২৪ ঘণ্টায় উভয় পয়েন্টে পানি কমেছে যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার ও ১২ সেন্টিমিটার। এছাড়া গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কুশিয়ারার পানি শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শেওলা পয়েন্টে পানি গত ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে। ফেঞ্চুগঞ্জে পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার।
উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত বুধবার বিকাল থেকে সিলেটে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে পানি ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত কমেছে। গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিশ্বনাথ এলাকায় বন্যা কবলিত এলাকার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার আমলসীদে বরাক, সুরমা ও কুশিয়ারার ত্রিমোহনায় বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে প্রবল বেগে পানি আমলসীদ এলাকা দিয়ে প্রবেশ করা শুরু করে। পানিতে আমলসীদ, বারঠাকুরী, উত্তরকুল, কাজিরপাড়া, রাড়িগ্রামসহ বারঠাকুরী ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীতে পানি কমায় নগরীর আবাসিক এলাকাগুলো থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো সুরমা তীরবর্তী উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, তেররতন, সাদিপুর, ঘাসিটুলা, শেখঘাটসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাসা-বাড়ির পানির পাম্প ও রিজার্ভ ট্যাংক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। শহরের বাইরে উপজেলাগুলোতে মানুষের খাবার ও পানির সমস্যার সাথে গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া বন্যার কারণে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক মিটার ও লাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে ঝড়ে গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। কোথাও সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে পড়েছে। তাই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে মারাত্মক বেগ পেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত