বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম। নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে পুরনো বর্ষবিদায় ও নতুন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বলীখেলা, জাতীয় খেলা কাবাডি প্রতিযোগিতারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে আদাজল খেয়ে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।সব মিলে বৈশাখের রঙে রঙিন হয়ে ওঠবে এবারের নববর্ষ এমনটাই মনে করছেন অনুষ্ঠান উদ্যোক্তারা।
তবে অনেকে বিকাল ৫টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার যে সরকারি ঘোষণা এসেছে, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বৈশাখী আয়োজনগুলো নিরাপদে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গত ৯ এপ্রিল এ উপলক্ষে আয়োজকদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে সিএমপির উপ-কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদ উল হাসান জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ি উন্মুক্ত স্থানে বৈশাখী অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে যেন সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তার উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে নগরীর সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনটি হয়ে থাকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের (সিআরবি) শিরীষতলায়। এবার দশম বারের মতো ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের’ এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সাহাবুদ্দীনের বলীখেলা। এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে কাবাডি প্রতিযোগিতাও। আয়োজন প্রসঙ্গে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি ও নাট্যজন স্বপন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা যেন একটি পরিশিলীত অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন, আমরা সে দিকটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নির্বাচন ক্ষেত্রে আমরা এবার মানটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। তবে এও ঠিক যে চট্টগ্রামের মতো বড় একটি শহরে বৈশাখীর গণআয়োজনের উপর সময় নির্ধারণ করে দেওয়াটা উচিত নয়।’
নগরীর সবচেয়ে পুরোনো বৈশাখী আয়োজন হয়ে থাকে ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে। ৪০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’ এবারও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে এখানে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নাট্যনির্দেশক ও প্রশিক্ষক আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, ‘সবার যোগে জয়যুক্ত হোক’ এই স্লোগানকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। গত ৪০ বছর ধরে নগরীর এই আয়োজন সত্যিকার অর্থে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সফল ও সার্থক হয়েছে। এবারও বাঙালি সংস্কৃতির মূল উপাদান লোকসঙ্গীত, বাউলগান, নৃত্য, আবৃত্তি, বংশীবাদনসহ নানা বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে।’
নগরীর আরেকটি প্রধান বৈশাখী আয়োজন হয়ে থাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে। জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজন শুরু হবে বর্ষবিদায়ের দিন বিকালে।
জেলা সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পীদের নিয়েই সাজানো হয়ে থাকে এই অনুষ্ঠান। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্ষবরণের দিন সকালে পিঠাপুলি ও পান্তা-পায়েসের ব্যবস্থা করে থাকেন। দিনভর অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নগরীর সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এদিকে নগরীর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৈশাখী আয়োজনের মধ্যে থাকছে ফাইভ স্টার হোটেল রেডিসন ব্লু'র জমকালো আয়োজন। এখানে পহেলা বৈশাখ সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লা। সঙ্গে থাকছে নানা বাঙালি খাবারের আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে সাজাহান মাঠেও এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৈশাখী উৎসব। গত চার বছরের মতো এবারও নগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘তারুণ্যের পহেলা বৈশাখ’। এর বাইরেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আয়োজন হতে যাচ্ছে নানামাত্রিক আয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/১২ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা