৩১ মার্চ, ২০২০ ২১:৩৬

করোনারভাইরাস : নিম্বআয়ের মানুষদের নাভিশ্বাস

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

করোনারভাইরাস : নিম্বআয়ের মানুষদের নাভিশ্বাস

রিকশাচালক জমির উদ্দিন। দুই সন্তানের জনক। দিনভর রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে জোড়াতালির সংসার। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক আয়ে পড়েছে ভাটার টান। সড়কে যাত্রী নেই, তাই রিকশায় ভাড়াও নেই। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় আসলেও মিলছে না যাত্রী। ফলে সংসারে সঙ্গী হয়েছে অভাব। 

মঙ্গলবার দুপুরে আন্দরকিল্লা মোড়ে দুঃখভরা কণ্ঠে বললেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কীভাবে সংসার চলছে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কতদিন এভাবে চলতে হবে তাও জানি না। আগে দৈনিক ৮০০ টাকা আয় করতে পারলেও এখন আয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরের অধিকাংশ মোড়েই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে রিকশাগুলো। একজন মানুষ দেখলে তিনটি রিকশা এক সঙ্গে এগিয়ে আসছে, ‘কই যাবেন ভাই, ওঠেন।’ কে কত টাকা দিবে, কোথায যাবে তা জিজ্ঞেস করছেন না। অবস্থা এমন হয়েছে, যাত্রী যাই দেন তা দিয়েও যেতে প্রস্তুত রিকশাচালক। 

নগরের কাজির দেউড়ি মোড়, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আন্দরিকল্লা, চেরাগি, দুইনং গেইট, জিইসি মোড়সহ অসংখ্য মোড়-জংসনে রিকশাচালকরা সারিবদ্ধ হয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।   

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার নির্দেশনা আসার পর রিকশাচালক, নিন্মআয়ের মানুষ, খেটে খাওয়া, দিনমজুর, শ্রমিকদের প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। তাদের জীবনাচারে এখন ত্রাহি অবস্থা। দিনে এনে দিনে খায় এমন মানুষদের এখন নাভিশ্বাস ওঠছে। 

সরকারি-বেসরকারিভাবে সরবরাহ করা খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া ত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্যের অভিযোগ থাকে। আর বস্তিবাসী, তৃণমূলের বাসিন্দা, পথশিশু, পাহাড়সহ বিভিন্নভাবে বসবাস করাবাসিন্দারাও ত্রাণের বাইরে থাকে।

বাটালি হিলের পাদদেশে ভাড়ায় থাকা দিনমজুর কফিল উদ্দিন বলেন, ‘দুই হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকি। গত চারদিন ধরে বাসায় বসে আছি। জমা যা ছিল তা সব শেষ। কি করব বুঝতে পারছি না। কোনো ত্রাণও পাইনি এখনো।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপতালের আগতদের বহির্বিভাগ এবং টেলিমেডিসিনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দিন মজুর, নিন্ম আয়ের মানুষ, রিকশাচালকসহ এ শ্রেণীর মানুষদের কথা এখন আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে। বিশেষ করে বিত্তবানদের এখন মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’   

চিকিৎসকদের স্বেচ্চাসেবী সংগঠন ইয়ং সোসাইল অ্যাক্টিভিজম বোর্ড- ওয়াইস্যাব’র ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোছাইন আজাদ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক নিয়মিত টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন জরুরি ভিত্তিতে খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোটাই বেশি প্রয়োজন। সমাজের অবস্থা সম্পন্ন মানুষদের এ ব্যাপারে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে।’     

জানা যায়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রাম নগরে ২২টি ট্রাকে করে সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে। সাধারণ ছুটিতে লোকজন এসব পণ্য টিসিবির পরিবেশকদের ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে কিনতে পারছেন। টিসিবির পণ্যের মধ্যে আছে পিয়াজ, তেল, চিনি ও ডাল। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করছে ৫০ টাকা, মসুর ডাল ৫০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও পিয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ টাকা।

টিসিবি চট্টগ্রামের পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নগরে ২২টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কম দামে। প্রতি ট্রাকে ৫০০ কেজি পিয়াজ, ৩০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি দেওয়া হচ্ছে। বাজার থেকে কম মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।’

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর