২২ মে, ২০২০ ২০:১৮
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে

বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদ করবেন রেল কর্মচারীরা!

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদ করবেন রেল কর্মচারীরা!

ফাইল ছবি

মহামারী করোনা ভাইরাসসহ নানা জটিলতায় স্বাধীনতা পরবর্তী এবার প্রথম রমজানের ঈদে বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদ করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মচারী। ফলে রেলের এসব কর্মচারী বেতন-বোনাসের টাকা না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের এক প্রকার না খাওয়ার মতো অবস্থায় পরিণতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ কর্মচারি বেতন, বৈশাখী ভাতা ও পেনশন পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। এসব নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক তোলপাড়ও। 

প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার বিষয়েও। তবে এবার ঈদের আগে রেলওয়ে থেকে কর্মচারীরা আদৌ বেতন-বোনাস পাচ্ছেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয়ে আছেন ভুক্তভোগীরাসহ রেলওয়ে শ্রমিকলীগের নেতারা।

অন্যদিকে সর্বশেষ গত কয়েক দিন চট্টগ্রামে রেলের পে অ্যান্ড ক্যাশ বিভাগে বেতন-ভাতা প্রদান করা হলেও বৃস্পতিবার অর্থ সংকটে  পেনশন দিতে পারেনি পে অ্যান্ড ক্যাশ বিভাগ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বয়স্ক এসব কর্মী সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বসে থেকেও পেনশন তুলতে পারেননি বলে সাবেক রেল কর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান।

রেলওয়ে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে নানা জটিলতায় রেল কর্মচারিদের বেতন-বোনাসের বিষয়ে সমস্যা হয়েছে। এখনও রেলের অনেক কর্মচারি বেতন-বোনাস পাননি। ঈদের আগেই অন্য কোন উপয়ে হলেও বেতন-বোনাস দেয়ার জন্য উর্ধ্বতনদের মাঝে আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেতন বোনাস না পাওয়ায় অনেকেই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। ঢাকাসহ চট্টগ্রামের অনেক রেল কর্মচারি এখনও বেতন-বোনাস পাননি। আজ-কালকের মধ্যে আদৌ পাবেন কিনা প্রশ্ন উঠেছে। যদি রেল কর্মচারিরা এসব টাকা না পান, তাহলে অনেক কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে বলেও জানান তিনি। তবে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করেই বেতন বোনাস দেয়ার জন্য রেল প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি।

রেলওয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহাজান পাটোয়ারী সাজু বলেন, দীর্ঘ চাকুরি জীবনে এবং রেলের ইতিহাসে এ প্রথম বেতন বোনাস ছাই ঈদ করতে হচ্ছে। এই দায় কার? তাদের বিচার করতে হবে বললেন এ নেতা।

রেলওয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলেন, এখনো এপ্রিলের বৈশাখী ভাতা পায়নি। প্রতি মাসের শুরুতে বিগত মাসের বেতন-ভাতা হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পাননি। ঈদের আগে মে মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। কেউ কেউ এপ্রিলের বেতন পেলেও ঈদের বোনাস পাননি। করোনার কারণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার পরও বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কর্মীদের হতাশ করেছে।

সাবেক কয়েকজন রেলওয়ের কর্মচারী বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে পেনশন তুলতে এসেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পেনশন তুলতে পারেননি। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে এখন। ঈদের আগে টাকার খুব দরকার হলেও আদৌ এখন নগদে হলেও টাকা পাবো কিনা জানি না। এসব নিয়ে নানা ভোগান্তির মধ্যেই রয়েছেন অনেকেই। তাছাড়া সাধারণ ছুটির কারণে ক্যাশ অফিসের নিয়মিত কর্মীদের অনেকেই কাজে যোগ দেননি এবং রেল কর্মচারীদের অনেকেই পেনশন ভাতা প্রদানে রেলওয়ের অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন।

পূর্বাঞ্চলের পে অ্যান্ড ক্যাশ বিভাগের ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্টেশন বন্ধ থাকলে রেলের নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদান করতে হয়। নানা কারণে টাকা তুলে এনে কর্মীদের দিতে একটু সময় লাগে। চেষ্টা করছি ঈদের আগেই যে কোনভাবে পাওনা পরিশোধ করতে। তবে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে এবং কর্মী সংকটে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় পরিচালন ব্যয় নির্বাহে স্টেশনের মাসিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল রেলওয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে উদ্যোগী হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দ্রুত ইএফটির মতো (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) নতুন পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে সংস্থাটি। এতে নগদে প্রদানের ক্ষেত্রে ফান্ড সংকটে বিলম্বিত হচ্ছে। করোনার কারণে সেকশনভিত্তিক আয় কমে যাওয়ায় মার্চ ও এপ্রিলে বিশেষ ট্রেনে করে বেতন-ভাতা ও পেনশন পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও করে রেলওয়ে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর