উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর পানিতে সাধারণত লবণাক্ততার হার শূন্য দশমিক ০৫ পয়েন্ট। কিন্তু এখন এ নদীর পানিতে লবণাক্ততার হার ৩ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততার হার অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধির পেয়েছে। এ কারণে চলতি প্রজনন মৌসুমে মা মাছের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গত তিনদিন ধরেই বঙ্গোপসাগারে অবস্থান করছে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এ কারণে বৈরি আচরণ করছে প্রকৃতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পূর্ণিমার জোয়ারের বর্ধিত পানি। গত সোমবার থেকে নদীতে লবণাক্ত পানি বাড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে কখনো মাঝারি কখনো ভারি বর্ষণও হয়েছে। সাগরে বেড়েছে পানির উচ্চতা, বেড়েছে জোয়ারের পানি। প্রবল জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা নদীতে প্রবেশ করেছে। ফলে হালদা নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মা মাছের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তবে মঙ্গলবার সকালে হালদা নদীর একাধিক পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়।
চবি হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ইয়াসের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে প্রবেশ করে। ফলে হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যায়। এটি মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ। এর বিরূপ প্রভাবও পড়তে পারে। লবণাক্ত পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়া নিয়ে সংশয়ও থাকতে পারে। এ সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন প্রবল বৃষ্টি, বৃষ্টিতে পাহাড়ি পানির ঢল এবং হালদা নদী থেকে কোনো প্রকারের পানি উত্তোলন না করা। অন্যথায় মা মাছ হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
জানা যায়, গত এক মাস ধরেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তবে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে। প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিই ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এসব তিথিতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর উজান অংশ পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে প্রবল বর্ষণের ফলে নদীর সঙ্গে যুক্ত ছড়া ও শাখা খালের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল হালদা নদীতে এসে পড়ে। তখন ঢলের সময় মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। চলতি মৌসুমে গত এপ্রিল থেকে তিনটি তিথি (জো) চলে যায়। কিন্তু মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে গত সোমবার ও মঙ্গলবার বৃষ্টির পর মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। তাছাড়া গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার জো। আগামী ২৮ মে পর্যন্ত থাকবে এ জো’র প্রভাব। গত মঙ্গলবার রাতে হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা ও সত্তার ঘাটসহ আশপাশের অংশে কয়েক শত নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম আহরণ শুরু করেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ