চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক পাহাড়ি চোলাই মদের কারখানা। চোলাই মদের অন্যতম উৎস পার্বত্য অঞ্চল থেকে চোলাই মদ পাচার করার পথে গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই পার্বত্য অঞ্চলের চোলাই মদ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নগরী কিংবা আশপাশ এলাকায় গড়ে তুলছে দেশি মদের কারখানা। গত কয়েক মাসে ছোট বড় কয়েকটি কারখানার সন্ধান পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রামের প্রশাসন।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘নগরীতে চোলাই মদের কারখানা স্থাপনের বিষয়টা নজরে আসার পর প্রত্যেক থানা পুলিশকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিদেশি মদ আমদানি কমে যাওয়া এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় বিদেশি মদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রায় অভিযান পরিচালনাসহ নানান কারণে চট্টগ্রামে চাহিদা বেড়েছে পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তৈরি চোলাই মদ। কিন্তু চোলাই মদের অন্যতম উৎসস্থল পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রামের নগরীতে আনার পথে বেশ কয়েক জায়গায় পড়তে হয় তল্লাশির মুখে। পাচারকারীদের অনেকে গ্রেফতারও হন। তাই গ্রেফতারের ঝুঁকি এড়াতে চোলাই মদের কারবারিরা চট্টগ্রাম নগরী ও তার আশপাশ এলাকায় গড়ে তুলেছে চোলাই মদ কারখানা। তারা নগরী কিংবা আশপাশের উপজেলার অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে তাতে গড়ে তুলেন মাদকের কারখানা। প্রশাসনের নজর এড়াতে অভিজাত এলাকা কিংবা মসজিদ, কবরস্থানের পাশেই গড়ে তুলছে চোলাই মদের কারখানা!
নগরীর খতিবেরহাট এলাকায় চোলাই মদ কারখানার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচলাইশ থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, ‘রাঙামাটি থেকে চোলাই মদ আনতে পথে প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই রাঙামাটি ভিত্তিক চোলাই মাদক ব্যবসায়ীদের কয়েকজন নগরীতেই গড়ে তুলে চোলাই মদের কারখানা। তারা খতিবের হাট এলাকার পাঁচ তলা ভবনের দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে তাতে মাদক কারখানা গড়ে তুলে। প্রশাসনের নজর এড়াতে মসজিদ ও কবরস্থানের পাশেই তারা বাসা ভাড়া নেয়।
বৃহস্পতিবার মিরসরাইয় ইকনোমি জোনে অভিযান চালিয়ে চোলাই মদ তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব। অভিযানে ১০ হাজার লিটার চোলাই মদসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ নভেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বাড়ইপাড়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসা অভিযান চালিয়ে চোলাই মদ তৈরি কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ, মদ তৈরির সরঞ্জাম, খালি স্যালাইনের প্যাকেট এবং আতপ চাল জব্দ করা হয়। এসময় গ্রেফতার করা হয় দুই বোনকে।
২৬ জুন নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন খতিবের হাট এলাকার ফ্ল্যাট বাসায় অভিযান চালিয়ে চোলাই মদের কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। অভিযানে অভিযানে ৭০৬ লিটার চোলাই মদ, চোলাই মদ তৈরির উপকরণ ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় মদ তৈরির ছয় কারিগরকে। ৯ মে রাঙ্গুনীয়া উপজেলার একটি চোলাই মদ কারখানায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ১২ হাজার লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় চারজনকে।
ফের কারখানার সন্ধান
মীরসরাই ইকোনমি জোনে অভিযান চালিয়ে চোলাই মদ তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব। অভিযানে ১০ হাজার লিটার মদসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন শরিফুল ইসলাম এবং মো. রিপন। বৃহস্পতিবার রাতে ইকোনমি জোনের ২ নম্বর প্রকল্প এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, বিদেশি কারখানার আড়ালে চোলাই মদ তৈরি হচ্ছে এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিপুল মদসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই