৩০ মে, ২০২৩ ২০:৪৬

অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে একক সিদ্ধান্তের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে একক সিদ্ধান্তের অভিযোগ

নগরের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি তালেব আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বকে সাময়িক বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। সভাপতির কথামতো নিয়োগ, নগদ অর্থ না দেওয়ায় পরিচালনা কমিটির সভা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করেন তিনি। একইসঙ্গে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দুর্নীতি করার জন্য ক্ষমতার দাপটে এমন কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়ব বলেন, ২০০৫ সালে একটি বহিষ্কার আদেশকে পুঁজি করে অবৈধভাবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বহিষ্কার আদেশের পর চার বছর মামলা চালানোর পর আদালত বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার আদেশ দেন এবং প্রধান শিক্ষক পদে পুনর্বহাল করারও নির্দেশনা দেন। এসব কাগজপত্র তৎকালীন শিক্ষাবোর্ডকে অবহিত করে যোগদান করেছি। কিন্তু তালেব আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষাবোর্ডের আপিলে আমার পক্ষে রায় আসেনি বলে আমাকে বহিষ্কার করেছে। মূলত আমার কাছ থেকে আর্থিকভাবে সুবিধা নিতে পারছে না সে। যার কারণে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে বোর্ডের একজন কর্মকর্তার যোগসাজশে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যেন তারা মিলেমিশে বিদ্যালয়টি লুটপাট করে খেতে পারে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুরী বলেন, অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ ছাড়া সকল কাজ করতে পারবে, তবে তা কমিটির সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি একক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। তবে জরুরি ভিত্তিতে যদি কোনো প্রয়োজন হয়, তাহলে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

অ্যাডহক কমিটির সভাপতি তালেব আলী বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়ব বহিষ্কার হয়ে এখন নানা কথা বলছেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং উনাকে ২০০৯ সালে পরিচালনা কমিটি অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। তিনি অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি কোনো কাজের কমিশন নেয়নি, কাজ তিনি করেছেন। শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন করেছেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে। এছাড়াও নানা অনিয়মের কারণে উনাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা যায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় এমপি প্রয়াত মোছলেম উদ্দীন আহমদ। তার মৃত্যুর পরও এ কমিটির মেয়াদ ছিল ১ মাস ১০ দিন। এই অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে তালেব আলী শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নেন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট অফিস আদেশে উল্লেখ আছে এই অন্তর্বর্তীকালীন জেলা প্রশাসক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও জেলা প্রশাসক চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সরকারি বেতনের অনুমোদন বিলে সভাপতি হিসেবে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এর মধ্যে দায়িত্ব নিয়েই তালেব আলী জানুয়ারি মাসের প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বিলে স্বাক্ষর করেন। একই সময়ে সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক ও তালেব আলী দু’জনই দায়িত্ব পালন করেছেন। মূলত নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দ্বিতীয়জনকে অ্যাডহক কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন শেষ হওয়ার পর আবারও নির্বাচন না করেই ৬ মাসের জন্য তালেব আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মেয়াদের কমিটিতে তালেব আলী সভাপতি, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু তৈয়বকে সদস্য সচিব, জুবাইদা খাতুনকে অভিভাবক প্রতিনিধি, সুভাস চন্দ্র নাথকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর বিধি ৩৯ এর ৪ উপধারা অনুসারে মোট চার জন্য সদস্যের তিনজনের উপস্থিতি প্রত্যেক সভার কোরাম পূর্ণ হবে। সে সভায় সংখ্যাধিক্যের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অ্যাডহোক কমিটি। কিন্তু তালেব আলী এসব নিয়মকে তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের প্যাড ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বকে শোকজ এবং সাময়িক বহিষ্কার করে। একদিকে সভাপতি পদটি অবৈধ, অন্যদিকে কোরাম পূর্ণ না করে একক সিদ্ধান্তে বহিষ্কার আদেশ আইনত অবৈধ।

প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কার আদেশ দিয়ে ক্ষান্ত হননি তালেব আলী। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক জেবুন নিছা খানমকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার চিঠি দিয়েছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক হতে অন্তত এমপিওভুক্ত স্কুলে ১০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হলেও তা নেই। একটি কিন্ডার গার্টেনে তিন বছর চাকরি করেই তা এমপিওভুক্ত দেখিয়ে অবৈধভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। মূলত এমপিওভুক্ত স্কুলে তার অভিজ্ঞতা এখনো ৩ বছর হলেও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তালেব আলী ও শিক্ষাবোর্ডের একটি চক্র তাকেই প্রধান শিক্ষক করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।

এদিকে অ্যাডহক কমিটির দায়িত্ব নিয়েই তালেব আলী স্কুলে চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগাতে বাধ্য করেন। এই কাজে মিস্ত্রির ১ লাখ ১২ হাজার টাকা বিলের মধ্যে ২৫ হাজার কমিশন নিয়েছেন এই সভাপতি। এছাড়াও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের, স্কুল পরিদর্শক, উপ সচিব, কন্ট্রোলারের রুমে ঘড়ি দেওয়ার কথা বলে স্কুলের ফান্ড থেকে ৪০ হাজার টাকা ক্যাশ নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা এখনও তদন্তাধীন। আগামী ৪ জুন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান শিক্ষাবোর্ডের উপসচিব মো. বেলাল হোসেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর