তিন পাবর্ত্য জেলার সমতলে তুলা উৎপাদনে পেয়েছে নতুন মাত্রা। গত কয়েক বছর ধরে সমতল ভূমিতে গাণিতিক হারে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বিপরীতে পাহাড়ি ভূমিতে কমে হয়েছে কচ্ছপ গতি। ৬ বছরের ব্যবধানে পাহাড়ি তুলাচাষে জমির পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ২৯৯ হেক্টর, বিপরীতে সমতলে বেড়েছে ৬২০ হেক্টর জমি। একইভাবে বীজতুলা উৎপাদনে ৬ বছর আগে ছিল ১৩২৬ মেট্রিক টন, ৬ বছর পর এসে তা দাড়িয়েছে ২৯৯৪ দশমিক ৫৪ মেট্রিক টন। প্রতি বছর মাত্র ২৭৮ দশমিক ৯ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন বেড়েছে সমভূমিতে। কিন্তু পাহাড়ে বীজতুলা উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৮২ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দীন আহমদ বলেন, আগের চেয়ে এখন তুলার উৎপাদন বেড়েছে। তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আগে জুম চাষের সাথে তুলা চাষ হতো এখন হচ্ছে না। তিন চার বছর আগে তুলার হাইব্রিড জাত এসেছে। এ জাত আমাদের আশা দেখাচ্ছে, এ জাতে তুলার ফলনও ভালো হয়। পাহাড়ি তুলায় ফলন কম হওয়াতে মাঝখানে অনেকে অনাগ্রহী ছিল।
বান্দরবান জেলা তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা ন্যু মং মারমা বলেন, প্রতি বছর তুলা চাষের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা চাষীদের নগদ অর্থ, নীটনাশক, সারসহ নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি। নতুন নতুন যারা তুলা চাষ করছে তাদেরও উৎসাহ দিচ্ছি। ফলে গত ২১-২২ অর্থ বছরে ৬৯ প্লটে, ২২-২৩ অর্থ বছরে ২৩০ ও ২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩৩০ প্লটে তুলা চাষ করছে চাষিরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তুলা চাষ করা হয়। পাহাড় ও সমভূমি দুই ভাগে তিন জেলায় তুলা চাষ করেন স্থানীয়রা। সমভূমি তুলাচাষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তিন জেলায় তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ হেক্টর জমির, কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে ৫২৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬শ ২ মেট্রিক টন, হয়েছে ১৩২৬ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয় ২৯১৩ বেল। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ হেক্টর জমির, কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে ৫৪৯ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০৮০ মেট্রিক টন, হয়েছে ১৪২২ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয় ৮২১৭ বেল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৫০ হেক্টর জমির, কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে ৬৬৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩১৫০ মেট্রিক টন, হয়েছে ১৭৯৬ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয় ৩৯৯৩ বেল। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৫০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ৮০৯ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০৪৮ মেট্রিক টন, হয়েছে ২২৫৫ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয় ৪৯৮৯ বেল। ২০২০-২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ হেক্টর জমির, হয়েছে ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬৮৬ মেট্রিক টন, হয়েছে ১৫৮৩ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয় ৩৪৭৮. ৪ বেল। ২০২১-২২ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০০ হেক্টর জমির, হয়েছে ১১৪৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৬০০ মেট্রিক টন, হয়েছে ২৯৯৪ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ৬৫৮১ বেল।
অপরদিকে পাহাড়ি তুলা চাষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তিন জেলায় তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭০০০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৬৮৯০ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৭৯৩ মেট্রিক টন, হয়েছে ৩৭৫৫ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ৮২৫৭ বেল। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তিন জেলায় তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭০০০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৬৭৫১ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৬৭৫ মেট্রিক টন, হয়েছে ৩৮৫৭ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ৮৪৬০ বেল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯২৮০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৭২৫৮ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৪০০ মেট্রিক টন, হয়েছে ৪৪০২ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ৯৮৯৪ বেল। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯১৫০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৭৭০৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫৫৫০ মেট্রিক টন, হয়েছে ৪৬৫৩ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ১০৪০২ বেল।
২০২০-২১ অর্থ বছরে তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭৫০০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৭১৯৫ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৭২৫ মেট্রিক টন, হয়েছে ৪৫৬৭ দশমিক ৯ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ১০৩৬৩ বেল। ২০২১-২২ অর্থ বছরে তুলাচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭১০০ হেক্টর জমির, অগ্রগতি হয়েছে ১৫৫৯১ হেক্টর জমিতে। ওই বছরে বীজতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৩৯০ মেট্রিক টন, হয়েছে ৪২৫০ দশমিক ৪ মেট্রিক টন ও আঁশতুলা উৎপাদন হয়েছে ৯৩৭৩ দশমিক ৬ বেল।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল