এক সপ্তাহ পর কর্মস্থলে ফিরেছে পুলিশ। সাত দিনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ না থাকায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল নিরাপত্তাহীনতায়। অর্থ, পরিবহন ও ব্যবসায়িক লেনদেনে তৈরি হয় স্থবিরতা। পুলিশ কর্মস্থলে যোগ দেওয়ায় তা কাটিয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর মনে। কর্মস্থলে ফেরা পুলিশকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। পুলিশ বলছে, আমাদের দায়িত্বে ফিরতে দেখে মানুষ খুশি হয়েছে। তারা আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। এখন আমাদের থানা ভবন, ট্রাফিক পুলিশের বিশ্রামের জন্য বক্সগুলো দ্রুত সংস্কার করলে দায়িত্ব পালন সহজ হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রাফিকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পুলিশ যখন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে, তখন আমরা দেখেছি মানুষ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসাহ দিয়েছে। পুলিশ কারো শত্রু না, মাঝে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ছাত্র-জনতার সাথে মিটিং করেছি আমরা। শিক্ষার্থীরা যে সব থানাগুলোতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে, তা পরিদর্শন করেছে। এসময় আমাদের চেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি কেঁদেছে থানাগুলোর ভয়াবহ অবস্থা দেখে। তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে, যদিও তারা জড়িত না। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে একটি কুচক্রী মহল এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, সড়কগুলো দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মানুষ এখন নির্ভয়ে বের হচ্ছে। সব জায়গাতে এখন একটা ভালো পরিবেশ বিরাজ করছে। এখন একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, এটা যেন নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের উপসানলয়গুলো নিজ নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ এলাকার সাধারণ মানুষ যেন সজাগ দৃষ্টি রাখে। আমরা যদিও বিশেষ নজরদারি করছি।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় কাজ করছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করছেন একদল শিক্ষার্থী। রাস্তায় নামার পর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের আলিঙ্গন করে স্বাগত জানাচ্ছে ছাত্র-জনতা। পুলিশ সদস্যরাও স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে নির্ভয়ে যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ থেকে বয়স্ক সব শ্রেণির মানুষ পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় দেখে আনন্দিত। কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলানো থেকে শুরু করে কুশল বিনিময় করছেন সবাই।
এদিকে নগরীর জিইসি মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অজ্ঞাত রোগীর বন্ধু সাইফুল ইসলাম নেসার। তিনি বলেন, অনেকদিন পর রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দেখে ভালো লাগছে। সবার কাছে অনুরোধ করছি-আপনারা পুলিশের পাশে থাকুন। পুলিশের প্রতি কেউ ক্ষিপ্ত হবেন না, তারাও এই দেশের মানুষ। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশকে দরকার। আগ্রাবাদ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. নোমান ও মো. সবুর বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহ ধরে ভালোভাবেই ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলেছে। তাদের নিয়ে গর্ববোধ করছি। অপরদিকে চট্টগ্রাম আদালতের বিভিন্ন দপ্তরে যোগ দেওয়া পুলিশকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আদালতের তরুণ আইনজীবি অ্যাডভোকেট আরিফ চোধুরী, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান জিয়া, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান, অ্যাডভোকেট সাজিদ আব্দুল্লাহ সাইফ ও অ্যাডভোকেট কহিনুর আক্তার কলি। অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ জনগনের বন্ধু। পুলিশ ছাড়া একটি রাষ্ট্র কখনোই চলতে পারেনা। একটি গোষ্ঠি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করবে। আমাদের আদালতে বিভিন্ন দপ্তর পুলিশ ছাড়া পুরোপুরি অচল। এই কয়দিন কার্যত আমাদের কোন কাজই সম্পন্ন করতে পারিনি। পুলিশ কাজে যোগ দেওয়ায় সেবা আইনজীবী এবং সেবাপ্রার্থী জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম