জালিয়াতির মাধ্যমে জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। এ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে গত এক বছর ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের একটা নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই মোতাবেক আমরা শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করি। আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি সভার এক নম্বর এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করি। আপনারা জানেন, নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে, যার ভিত্তিতে আমাকে নির্দেশনাটা দেওয়া হয়।
২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে তার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। ফলে তার একাডেমিক সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং ভেরিফায়েড কপি পর্যালোচনাপূর্বক বাতিল করা হয়েছে। তাহলে ফলাফল জালিয়াতির বিষয়ে একাডেমিক যে পানিশমেন্ট সেটা হয়ে গেল। নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে এ জালিয়াতির জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।
একইভাবে আরও পরীক্ষার্থীর ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নারায়ণ চন্দ্র নাথ সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের চট্টগ্রামের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে বছর তার ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
ফলাফল ঘোষণার পর অভিযোগ ওঠে, নারায়ণ নাথ তার ছেলেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জিপিএ-৫ পাইয়ে দিয়েছেন। কে বা কারা নক্ষত্র দেব নাথের ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করলে তার মা বনশ্রী দেবনাথ নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর ফলে বিতর্ক আরও জোরালো হয়। এ অবস্থায় জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, তদন্তে নারায়ণ নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এজন্য তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। একই নির্দেশনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফলাফল বাতিল এবং জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে বলা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই
