নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেছেন, নারীরা ঘরে যতোই কাজ করুক, পুরুষ বলবে তুমি তো শুধু খুন্তি নাড়ো। এখনো নারীদের ৭০ ভাগ প্রসংশা হয় রূপ নিয়ে, গুণ নিয়ে হয় ৩০ ভাগ। তাই নারীকে অধিকার আদায়ে শিক্ষায়, জ্ঞানে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বলেন, নারী উন্নয়নে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্তমানে চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী কোটা চালু আছে। নারীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে ২০৪০ সালে হয়ত পুরুষ কোটা চালু হয়ে যাবে।
শনিবার (৫ মার্চ) ইডব্লিউএমজিএল'র কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতিবাচক হলে কাজ করা সহজ হয়। বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। নারীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময় তিনি আফসোস করে বলেন, নারী উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মেয়েরাই ১৮ বছরের আগে বিয়ে করার জন্য রেডি হয়ে আছে। এ নিয়ে আমি নিজেই ঝামেলায় আছি। মূলত লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তাদেরকে বুঝানো হয়নি। তবে শিক্ষায় গত ১০ বছরে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার ৭০ ভাগ থেকে কমে ৪০ ভাগে নেমেছে বলে জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী নারী-পুরুষের বিভাজন দূর করতে যুবসমাজকে বোঝানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে কোটা পদ্ধতির সমালোচনা করে চুমকি বলেন, আমি নিজেও কোটার বিপক্ষে। কিন্তু, যেহেতু বাঁশি দেওয়ার আগেই পুরুষরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে, তাই সমান জায়গা থেকে নতুন করে দৌড় শুরু করতে হলে নারী কোটার দরকার আছে। নারীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ২০৪০ সালে হয়ত পুরুষ কোটা চালু হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে উচ্চশিক্ষিত নারীর সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, ভর্তির ক্ষেত্রে এখন পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, শিক্ষাজীবনে তিনি একবার রক্ত দিয়েছিলেন। তাতে তার মা অত্যন্ত দুঃশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। তাকে বকাঝকা করেছিলেন। কিন্তু বাবা পিঠ চাপড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। উল্টো বাহবা দিয়ে এমন কাজ আরও করার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। এমনকি বিয়ের সময় তার বাবা শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে আগেই আলাপ করে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, বিয়ের পর তারা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) তার (চুমকীর) লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন। বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের উৎসাহ ও সহযোগিতায় তিনি আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বসুন্ধরা গ্রুপের টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোর'র প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান, কালের কণ্ঠের সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান, সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অব. মোহাম্মদ আলী শিকদার, অভিনেত্রী নার্গিস আক্তার, গাইনোকোলজিস্ট ডা. নওশিন শারমিন পূরবী, জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার সাথিরা জেসি প্রমুখ । অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম।
বিডি-প্রতিদিন/৫ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ