জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় ১৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা আজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন, মহিতোষ রায় টিটো (ইতিহাস-৪০), ইকরামুদ্দিন অমি (মার্কেটিং-৪০), সুব্রত কুমার সাহা (পরিসংখ্যান-৪১), বায়েজীদ (উদ্ভিদ বিজ্ঞান-৪২), সিফাত আহমেদ রাতুল (বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-৪৩), প্রিতম আরিফ (ইতিহাস-৪৩), বিপ্লব হোসেন (উদ্ভিদ বিজ্ঞান-৪৩), আজমুস্সাহান নওরোজ প্রণয় (ভূগোল ও পরিবেশ-৪৩), ইকরাম নাহিদ (পরিসংখ্যান-৪৩), আল-আমিন (ভূগোল ও পরিবেশ-৪৩), তপু সুলতান (ইতিহাস-৪৪), আবদুল্লাহ আল ফারুকী ইমরান (ইতিহাস-৪৪), ফাহাদ (ইতিহাস-৪৪) এবং রবিন সরকার (পরিসংখ্যান-৪৪)। আগামী ১৮ জুনের মধ্যে অভিযুক্তদের এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আশুলিয়া পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে গোলাম সরোয়ার নামে এক যুবক এক তরুণীকে কৌশলে অপহরণ করে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে নিয়ে আসেন। মেয়েটি বিষয়টি বুঝতে পেরে তার মোটরসাইকেল থেকে নেমে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় বিডিনিউজের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে ফোন দিয়ে তাদের হাতে ওই যুবককে তুলে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অপেক্ষা করতে থাকেন।
পরে জাবি ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো এসে ওই যুবককে নিজের কব্জায় নিতে চাইলে তাতে বাধা দেয় শফিক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টিটো এবং অমি’র নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উক্ত নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে দশটায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে শফিককে মারধর করে। পরে পিঠে এবং মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত শফিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত টিটোকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে দায় সেরেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি ও সাধারন সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল। টিটোর বিরুদ্ধে এর আগে অনেক অভিযোগ থাকলেও কখনও ব্যবস্থা নেয়নি শাখা ছাত্রলীগ।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক এ নেতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা। টিটোকে আজীবন বহিস্কারসহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। টিটোর অতীত কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ বারবার প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ সাধারন শিক্ষার্থীদের। শফিককে মারধরের ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র হলেও অবৈধভাবে মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থান করেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতন, রিক্সা চালক ও সাধারন ছাত্রদের মারধর, আবাসিক হল প্রভোস্টকে লাঞ্চিত, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে গভীর রাতে এক ছাত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক ঐ নেতা। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার গভীর রাতে মীর মোশারফ হোসেন হলে ১১০/বি নং কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/১০ জুন ২০১৬/ হিমেল-১১