নতুন হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় ছাত্রী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার সকালে ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে এই হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হল আন্দোলনের ধর্মঘটের কর্মসূচিকে ঘিরে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান নেয় জবি ছাত্রলীগ। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসের নতুন ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেন। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এতে গোলাম রাব্বি, অনিমেষ রায়, মোহাম্মদ রাজন, ছাত্রী ও সাংবাদিকসহ আহত হয় ২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংবাদিক এসময় সংবাদ সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের রোষানলে পড়তে হয়।
এনটিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহ আলম বেপারী বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ছবি তুলতে গেলে শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা আনিসুর রহমান শিশির আমার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং গালাগালি করেন।’ দায়িত্ব পালনকালে অনলাইন পত্রিকার প্রতিনিধি মাছুম বিল্লাল আখন্দের মোবাইল ও মানিব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এখানেও তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে আরও কয়েকজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় অবকাশ ভবনের ক্যান্টিনে সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ কারণে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি তারা।
এদিকে, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে লাথি, কিল-ঘুষি মারতে দেখা গেছে।
জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম হামলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছিল মাত্র।
হামলার শিকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আল আমিন জানান, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে গলা টিপে ধরার পাশাপাশি বৃষ্টির মতো কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। অনেক ছাত্রীদের ওপরও হামলা করেছে।
জবি ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কিশোর রায় বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হল আন্দোলন বন্ধ করতেই তারা আন্দোলন নামের একটি কৌশল বেছে নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তবে এ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড়ালে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ বার বার আন্দোলনে যোগ দিলেও তাদেরকে ফ্লোর না দেওয়ার কারণেই এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ মারামারির ঘটনাটি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে'।
শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা: হল আন্দোলন ও ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের মতো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সাধারণ সভা করেছে জবি শিক্ষক সমিতি। বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে কারাগারে হলের দাবিতে সহমত পোষণ, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, দাবি আদায়ের লক্ষে প্রধানমন্ত্রী সাথে সাক্ষাৎ, ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ, সিন্ডিকেট কর্তৃক আবাসন সংকট নিরসন কমিটি গঠনের দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি জানানো হয় ।
সাংবাদিক আহতের প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ছাত্রলীগের সকল ইতিবাচক সংবাদ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রবিবার দুপুরে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরি সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচার দাবি জানানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ