উগ্র জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নিয়ে এবার নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী। নগরীর প্রধান প্রধান বৈশাখী আয়োজনগুলোতে দর্শক-শিল্পী সকলের কণ্ঠে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারিত হয়েছে মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমের মধ্যদিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সেইসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে হাজার বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে।
সিটি করপোরেশনের বৈশাখ : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে নগরীর স্বাধীনতা পার্কে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। অনুষ্ঠানে করপোরেশনের ময়ের ও নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাঙালি খাবারে ভরপুর ছিল এই আয়োজন।
সিআরবি শিরীষতলা : নগরীর সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী আয়োজনটি হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া সিআরবি শিরীষতলায়। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য আসর শুরু হয় ভোর ৭টায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগাং এর বেহালার সুরে সুরে। এরপর একে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নিয়েছে সংগীত ভবন, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, বোধন আবৃত্তি স্কুল, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, শব্দনোঙর, ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদসহ অন্তত ৩০টি সংগঠন। অনুষ্ঠানে বাউল গান পরিবেশন করেন বাউল রাজ্জাক সাঁই ও তার দল। সবশেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সোয়া ৫টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ার: ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তী খেয়াল পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের বর্ষবরণ আয়োজন। ভোর ৬টায় ডিসি হিলে শুরু হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বর্ষবরণের ১ম অধিবেশনে ‘সংগীত ভবন, জয়ন্তী, গুরুকুল সংগীত একাডেমি, গীতধ্বনি, ইমন কল্যাণ সংগীত বিদ্যাপীঠ, সৃজামি সাংস্কৃতিক অংগন, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র, স্বরনন্দন প্রমিত বাংলা চর্চা কেন্দ্র ও বিভাস আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র’ সংগঠনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি: ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। শোভাযাত্রাটি সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে। শিল্পকলায় শুরু হয় মূল আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমীন। এতে সমবেত সঙ্গীত, সমবেত নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিসহ বিশিষ্ট শিল্পীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় গিয়ে শেষ হয়। এতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আকতার চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ডিন এবং প্রক্টর মো. আলী আজগর চৌধুরীসহ শিক্ষক-শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব: এবারও প্রেস ক্লাবের সদস্যরা প্রেস ক্লাবের আবদুল খালেক মিলনায়তনে সকাল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও বাঙালিভুজের মাধ্যমে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এতে ক্লাব সদস্যের পরিবার পরিজন অংশগ্রহণ করেন।
বনিক পাড়ায় বৈশাখ: অবকাঠামোসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সচেষ্ট থাকাটাই হচ্ছে সত্যিকার দেশপ্রেম। জিপিএইচ গ্রুপ এই আদর্শকে সামনে রেখে দেশীয় সংস্কৃতির শিকড় সন্ধানী বাংলাবর্ষকে বরণ করে নিয়েছে। নগরীর সংশ্লিষ্ট এই বাণিজ্যিক এলাকায় জিপিএইচ এর এটিই একমাত্র উদ্যোগ।
অভয়মিত্র ঘাটে তারুণ্যের বৈশাখ : ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের উদ্যোগে এবারও নগরীর অভয়মিত্র ঘাটের কর্ণফুলী নদীর তীরে তারুণ্যের বৈশাখী অনুষ। ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার