ময়না তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের সংকটের কারণে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের লাশ কবর থেকে তোলা যাচ্ছে না। তবে আগামি সপ্তাহের যে কোনো দিন রাউধার লাশ তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাউধার লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন আদালত। লাশ তোলার সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. রক্তিম চৌধুরীকে উপস্থিত থাকার জন্য বুধবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুব্রত পাল নির্দেশও দেন।
এরপর ডা. রক্তিম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি লাশ তুলতে চান। এ জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সব আয়োজন করছেন। তবে রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বলেছেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে পিছিয়ে গেছে লাশ তোলার দিনক্ষণ।
তিনি জানান, এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে রাউধার লাশের যে ময়না তদন্ত করা হয়, সে ময়না তদন্তকারী বোর্ডের তিন সদস্যের দুজনই ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। এ জন্য তাদের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে রাউধার বাবার আপত্তি আছে। তাই নতুন করে ময়না তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আসমাউল হক বলেন, রামেকের মর্গেই রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করা হবে। এবারো গঠন করা হবে মেডিকেল বোর্ড। সে বোর্ডের সবাই হবেন রামেকের। কিন্তু বোর্ড গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে লাশ উত্তোলনে বিলম্ব হচ্ছে।
গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ইসলামী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধা এ কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নীলনয়না রাউধা ছিলেন মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল। মাত্র একুশ বছরের রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
রাউধার লাশ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এরপর রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। পরে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাউধাকে রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসে ঘটনা তদন্ত করেন। দেশে ফিরে গিয়ে তারা জানান, রাউধাকে হত্যার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে গত ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন।
হত্যামামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় রাউধার সহপাঠি সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মিরে।
সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সিআইডি বলছে, হত্যার প্রমাণ না মিললে গ্রেফতার করা হবে না সিরাতকে। তবে এরই মধ্যে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে নজরদারির ভেতরেও রাখা হয়েছে।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যামামলাটি তদন্ত করছিলেন শাহ মখদুম থানার পরিদর্শক আনোয়ার আলী তুহীন। আর অপমৃত্যুর মামলাটি তদন্ত করছিলেন রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম।
রাউধার মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনে তার কক্ষ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন রাশিদুল ইসলাম। সে প্রতিবেদন এখনও ঢাকা থেকে আসেনি। এরই মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন