রামপুরা থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত ভূমি মালিকদের দুঃশ্চিন্তার অবসান হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জমি প্রত্যপর্ণের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। আজ দুপুরে মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
দুপুরে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভুমি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক(ডিসি)সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৩৮ এলএ কেসে দাগের ভূমি একসময় সরকার অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। পরবর্তীতে সেটি অধিগ্রহণ না করে অবমুক্ত করে দেয়। কিন্তু রাজউক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এই দাগের প্রায় ১৩০০ একর ভূমি অবমুক্ত না করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে। আজ সংশ্লিষ্টদের ওই সব জমি প্রত্যপর্ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বছরের পর বছর খাজনা পরিশোধের গ্যাঁড়াকলে পড়ে নিজের বিপদের সময়ও জমি কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি করতে পারছেন না বাড্ডার বিস্তৃত এলাকার লোকজন। সম্পদ আছে কোটি কোটি টাকার। অথচ সেই সম্পদ বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ফলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন চিকিৎসার অভাবে। শুধু ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করতে না পারার কারণে বাড্ডা থেকে শুরু করে খিলক্ষেত পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ এমন কঠিন সংকটে পড়েছেন। এ নিয়ে আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'বিক্ষুব্ধ ১৫ লাখ নগরবাসীর আন্দোলন প্রস্তুতি' শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
সরেজমিন গুলশান, বাড্ডা ও ক্যান্টনমেন্ট ভূমি অফিসে গিয়ে এমন সংকট আর মানুষের করুণ সমস্যার চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে ঢাকার ডিসির নির্দেশে বাড্ডা, জোয়ার সাহারা ও ভাটারা মৌজার ১৩৮৫ একর অবমুক্তকৃত সম্পত্তির খাজনা নেওয়া এবং নামজারি বন্ধ রাখার পর থেকে এই এলাকার হাজার হাজার ভূমি মালিক অসহায় হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনে তারা কেউ জমি বেচাকেনা কিংবা কোনো উন্নয়ন করতে পারছেন না। বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে না পারায় অনেকেই বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে অনেক কন্যা দায়গ্রস্ত অভিভাবক মেয়ের বিয়ে কিংবা ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কথাও ভাবছেন।
বাড্ডা, গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট তহশিল অফিসে কর্মরতরা জানান, প্রতিদিন তাদের অফিসে স্থানীয় লোকজন এসে জমির খাজনা নিতে কিংবা নামজারির আবেদন করেন। কিন্তু ডিসি অফিসের নির্দেশনার কারণে তাদের পে খাজনা আদায় এবং নামজারি সম্পন্ন করার কাজ করা সম্ভব হয় না। এর ফলে অনেকেই কান্নাকাটি শুরু করে দেন। খাজনা দিতে না পারলে জমি বেচা যাবে না। ফলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। অসুস্থ মা-বাবা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। এ কথা বলতে বলতে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ভাটারার স্থায়ী বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যানের অন্যায় এবং বেআইনি সিদ্ধান্তের কারণে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একটি সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী যে কোনো সময় ফুঁসে ওঠতে পারেন। ইতিমধ্যে তারা বাড্ডা, ভাটারা ও জোয়ার সাহারা এলাকায় মত বিনিময় সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন। রাজউক চেয়ারম্যান এবং ঢাকার ডিসির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলে তারা রাজপথ অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। পবিত্র রমজানের কারণে সেই কর্মসূচি স্থগিত থাকলেও ঈদের পর সেটা শুরু করা হবে। ’
অনুসন্ধানে জানা যায়, রামপুরা ব্রিজ থেকে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার স্থাপনা, অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট কিংবা কল-কারখানা গড়ে উঠেছে। সে সঙ্গে সেখানে রয়েছে অনেক বড় বড় শপিং সেন্টার, মার্কেট এবং হাইরাইজ বিল্ডিং। যা ঘিরে সেখানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। সম্পত্তির খাজনা এবং নামজারি বন্ধ রাখার কারণে পুরো ব্যাংক ঋণ অনিশ্চিত অবস্থায় মধ্যে আছে। এমন অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি রয়েছেন যারা তাদের সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়েছেন। যা প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। তারা সম্পত্তির হালনাগাদ খাজনার রশিদ দিতে পারছেন বলেও নতুন করে ঋণ মঞ্জুর করতে পারছেন না। এর ফলে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এর ফলে শুধু সাধারণ মানুষ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। একই সঙ্গে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৩/৪ বছর ধরে খাজনার টাকার পাশাপাশি নামজারি ফি সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। খাজনা ও নামজারি বন্ধ থাকায় পুরো এলাকার জমিজমা বিক্রি এবং ব্যাংকে মর্গেজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দলিল রেজিস্ট্রি থেকে আয়কৃত কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ জুন, ২০১৭/মাহবুব