ঈদের ছুটি, মাত্রা অতিরিক্ত আমদানি এবং লাগাতার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে মারাত্বক জাহাজ-কনটেইনার জটের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতির পাইপ লাইন খ্যাত এ বন্দর। জটে পড়ে ধারণ ক্ষমতারও বেশি কনটেইনার পড়ে রয়েছে বন্দরে। বন্দরের জেটি এবং বর্হিনোঙ্গরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় শত জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, ‘ঈদের ছুটি এবং টানা প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা জাহাজ ও কনটেইনার জট। এ সমস্যা থেকে বের হতে কাজ করছে বন্দর কতৃপক্ষ।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন (বাফা)’র পরিচালক (বন্দর ও কাস্টমস) খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে বন্দরে কনটেইনার জট শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে তা মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। এখন পণ্য ডেলিভারিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খুব হচ্ছে। জটের কারণে বন্দরে নতুন কোন কনটেইনার খালাসের জায়গা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ জটের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এ জটের প্রভাব পড়বে।’
ব্যবসায়ীদের দাবি, লাগাতার প্রাকৃতিক দুযোর্গ, ঈদের ছুটি এবং বাজেটের আগে মাত্রাতিরিক্ত আমদানির ফলে তৈরি হয়েছে এ জাহাজ ও কনটেইনার জট। এ জটে পড়ে মাশুল দিতে হচ্ছে সব পক্ষকেই। বন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারীদের খরচ বাড়ছে। কনটেইনারে নির্ধারিত সময়ের বেশি পণ্য রাখার জন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা দিতে হবে আমদানীকারকদের। আমদানি করা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিলম্বে পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, প্রতি বছর ঈদের পাশাপাশি বাজেটকে সামনে রেখে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ঈদ ও বাজেট ভিন্ন সময় হওয়ায় তা বন্দরের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এ বছর একই সময়ের মধ্যে বাজেট ও ঈদ পড়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে টানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র কারণে আড়াই দনি বন্ধ ছিল বন্দরের কার্যক্রম। মোরা’র বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই দেখা দেয় নিম্নচাপ ও প্রবল বর্ষণ। সব মিলিয়ে বন্দরের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। ৩৬ হাজার ৩৫৭টি ধারণ ক্ষমতার এ বন্দরের বর্তমানে বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রয়েছে প্রায় সাগে ৩৬ হাজার। যদিও নিয়ম অনুযায়ী যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য ধারণ ক্ষমতার অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। কন্টেইনার জটের পাশাপাশি বন্দরে ছুটির কারণে দেখা দিয়েছে জাহাজ জটও দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটি এবং বর্হিনোঙ্গরে ৬০ থেকে ৭০টি জাহাজের অবস্থান থাকলেও বর্তমানে জাহাজ রয়েছে প্রায় একশটি। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বর্তমানে প্রতিটি জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে কমপক্ষে ৬ দিন অপেক্ষার পর জেটিতে নোঙ্গর করার অনুমতি পাচ্ছে। জেটিতে পণ্য খালাসে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ দিন। কোন জাহাজ যদি অতিরিক্ত একদিন বন্দরে অপেক্ষা করতে তাহলে ১০ থেকে ১২ ডলার চাটারকস্ট হতে হয়। এ খরচ পরে আমদানিকারকদের কাছ থেকে তুলে নেবেন জাহাজ কতৃপক্ষ।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার