চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীরা তীব্র পানি সংকটে ভূগছেন। প্রতিদিনের ট্রেন ভ্রমণকারী শত শত যাত্রীরা লবণাক্ত পানি পান করছেন দীর্ঘ ৬ মাস ধরেই। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ট্রেন যাত্রীরাসহ রেলওয়ের ওয়ার্কশপ-মার্শালিং ইয়ার্ডে পানি সংকটে ট্রেন পরিচর্যা করতে অসুবিধা, চট্টগ্রামের রেলের সরকারি বাসা, অফিস বিভিন্ন স্থাপনায় লবণাক্ত ও বিষাক্ত পানি ব্যবহার করছেন ভুক্তভোগী বসবাসকারীরা। এসব পানি থেকে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে রেল প্রশাসন এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে পানি নেয়ার জন্য রেল প্রশাসনের নীতিগতভাবে অনুমোদনও রয়েছে বলে জানান পূর্বাঞ্চলের মহাব্যস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই।
দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিআরবি, টাইগারপাস, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, গোয়ালপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় বিষাক্ত পানি মুক্ত ও পানির সংকটে প্রায় ১২ হাজার স্টাফ পানি বিহীন হয়ে পড়ছে দিন দিন। এ পানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার বিষয়ে সোমবার দুপুরে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই’র সাথে রেলশ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এক জরুরী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পূর্বাঞ্চলের জিএম প্রকৌশলী আবদুল হাই ছাড়াও জিএম কার্যালয়ে এসময় উপস্থিত ছিলেন পূর্বাঞ্চলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুজ্জামান, চীফ পার্সোনাল অফিসার (সিপিও) আজয় কুমার পোদ্দার, বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা (সিইই) আনোয়া হোসেন, কেন্দ্রীয় রেল শ্রমিক লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সস্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, শ্রমিকলীগ নেতা কামাল পারভেজ বাদল, রাশেদুল ইসলাম মিতুন, শফিকুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল ফয়সাল, শাহে নূর, তারেক, ইমামসহ আরো অনেকেই।
সুজন দাশ গুপ্ত নামের এক যাত্রী বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সুপেয় পানিতে রয়েছে মারাত্মক লবণাক্ত। প্রতিদিনের শত শত যাত্রী ট্রেন ভ্রমণ করলেও এসব পানি খাওয়া নিয়ে নিয়মিত ভোগান্তিতে রয়েছে। এসব পানি থেকে অসুস্থতার আতংকে মুখে নিতেও ভয় পাচ্ছে যাত্রীরা। তবে এ পানিসহ নানাবিধ সমস্যার সংকট থেকে দ্রুত যাত্রীদের মুক্ত না হলে আরো প্রকট আকার ধারণ হবে বলে জানান তিনি।
রেল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ১২ হাজার রেলের স্টাফ পানি সমস্যায় ভূগছি। বাইরে থেকে পানি কিনে অনেকেই কাজ শেষ করছেন। পানির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রেলে বসবাসকারীদের সমস্যায় রয়েছে। রয়েছে রেলের হাসপাতালেও পানি সংকট। এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধানের লক্ষে জিএমসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের মতবিনিয় করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।
ট্রেন যাত্রী ও রেলওয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মারাত্মক পানি সংকটে ভূগছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাসা, অফিস ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ ৫০ হাজার মানুষ। রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে হাজার হাজার ট্রেন যাত্রীও। রেলওয়ের ওয়ার্কশপ-মার্শালিং ইয়ার্ডে পানি সংকটে ট্রেন পরিচর্যা করতে অসুবিধার সৃষ্টির পাশাপাশি রেলওয়ে হাসপাতাল, বর্তমানে রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে পরিবেশিত পানি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পানি দূষিত করে রাখায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এবং লবণাক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে আবাসিকের বাসিন্দাদের মাঝে। এতে অনেকেই বাহির থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। তাছাড়া রেলের পাম্প নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে ব্যহত হচ্ছে ওয়ার্কশপ-সহ মার্শালিং ইয়ার্ডের কর্মকান্ড। ওয়াশপিটে প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে রেক ও ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ট্রেন পরিচালনা ব্যাঘাত ঘটছে। নামে মাত্র যেসব পানি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোও লবণাক্ত পানি। রেলের পানি সংকটের চাহিদার বিপরিতে ঘাটতিকৃত পানি চট্টগ্রাম ওয়াসা হতে সরবরাহ নেয়ার বিষয়ে গত ৯ আগস্ট পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবরে দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসন দ্রুত সমাধানের জন্য ওয়াসা থেকে পানি দিতে অনুমোদনও দিয়েছে রেল প্রশাসন। তবে কবে নাগাত এ সমাধান হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন সকলের মাঝে। গত কয়েক মাস ধরে সিআরবি এলাকা সংলগ্ন গোয়াল পাড়া পানির পাম্প নষ্ট থাকায় পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে সদরদফতরের নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়াও সিআরসি সংলগ্ন রেলওয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। রেলের মালিকানাধীন ফয়স’ লেকের পানি দিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ করা হলেও ইজারা গ্রহীতা কনকর্ড গ্রুপ লেকের পানি দূষিত করে রাখায় অনিয়মিতভাবে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ করা হচ্ছে আবাসিকের বাসিন্দাদের।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন